কার্যক্রম পরিচালনা নীতিমালা

বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক
কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা
প্রথম সংস্করণ: সেপ্টেম্বর ২০১২
দ্বিতীয় সংস্করণ: সেপ্টেম্বর ২০১৪
তৃতীয় সংস্করণ: সেপ্টেম্বর ২০১৭
চর্তুথ সংস্করণ: ডিসেম্বর ২০১৯

‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’ কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা

পটভূমি (Background):
‘‘নারীরাই ক্ষুধামুক্তির মূল চাবিকাঠি’’ এই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর উদ্যোগে ২০০৬ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে তিন দিনের একটি ফাউন্ডেশন কোর্স আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ কার্যক্রমের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে এই কার্যক্রম চলতে থাকে। ক্রমবর্ধমান হারে নারীরা যুক্ত হতে থাকে এই কর্মসূচির সাথে। ফাউন্ডেশন কোর্স পরবর্তী প্রতি মাসে দিনব্যাপী ফলোআপ কর্মশালার মাধ্যমে নেত্রীদের সক্রিয়তা, নেতৃত্বের দক্ষতা ও সামর্থ্য বিকাশের নিয়মিত ও ধারাবাহিক উদ্যোগ চলতে থাকে বছরব্যাপী। একইসাথে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নারীনেত্রীদের মধ্যে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা তীব্র হতে থাকে এবং তাদের মধ্যে গড়ে উঠে গভীর আন্তঃসম্পর্ক। এরই ধারাবাহিকতায় ০৬ এপ্রিল ২০০৭ এই নেত্রীরা প্রথম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়েই ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে।

অনুচ্ছেদ-১
সংগঠনের নাম ও ঠিকানা (Name of the Organization and address): সংগঠনের নাম হবে ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’। ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ’-এর প্রধান কার্যালয় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সচিবালয় হিসেবে বিবেচিত হবে; যার বর্তমান ঠিকানা: ২/২ ইকবাল রোড (পঞ্চম তলা), ব্লক: বি, মিরপুর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা- ১২০৭। ফোন: ৯১৩ ০৪৭৯ ও ৯১৪ ৬১৯৫; ফ্যাক্স: ৯১৪ ৬২৭১
ওয়েবসাইট: http://www.bikoshitonari.net. ফেইস বুক পেইজ বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক

অনুচ্ছেদ-২
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Goal and Objectives): ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’-এর মূল লক্ষ্য হবে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ সূচিত কন্যাশিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রমকে সারাদেশে বিস্তৃত ও অধিকতর ফলপ্রসূ করা।

নেটওয়ার্ক হবে এমন একটি প্লাটফর্ম, যা তৃণমূলের নারীদের নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করবে, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সমর্থন ও জোরদার করবে, নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের অবসানের লড়াইকে বেগবান করবে, নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াবে এবং নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গণজাগরণ সৃষ্টির মাধ্যমে জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজি’ বাস্তবায়ন করবে।

নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ’-এর পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

অনুচ্ছেদ-৩

সংগঠনের প্রতীক (Monogram of organization):
সংগঠনের প্রতীক হবে গতিশীল চক্রে পুস্তক ব্যাগ সম্মিলিত নারীর প্রতিবাদী হাত।

  • উত্তোলিত নারীর প্রতিবাদী হাত বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে নারীর সুদীর্ঘ আন্দোলনের প্রতীক।
  • পুস্তকের ব্যাগ নারীর জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির প্রতীক।
  • উপরে নিচে দুটি গতিশীল চক্র পর¯পরের সেতুবন্ধনের প্রতীক।

অনুচ্ছেদ-৪
নেটওয়ার্ক পরিচালনার মূলনীতি (Guiding Principles of Network):
সমতা (Equality): মানুষে-মানুষে ও নারী পুরুষে ‘সমতা’ এই দর্শন ধারণ, লালন এবং সর্বক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটবে।
রূপান্তরকারী নেতৃত্ব (Transformative Leadership): নেতৃত্ব হবে গতিশীল, স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বয়ংক্রিয়, যার উদ্দেশ্য হবে নারী তথা পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তর ঘটানো। এর প্রতিটি কার্যক্রম গৃহীত ও বাস্তবায়িত হবে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে ও স্থানীয় নেতৃত্বের উদ্যোগে।
স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা (Transparency and Accountability): নেটওয়ার্কের তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করা। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার চর্চা করা। প্রত্যেক সদস্য পরিচালিত হবেন নিজস্ব তাগিদ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে।
দায়িত্ব ও অঙ্গীকার (Responsibility and Commitment): প্রত্যেক সদস্য হবেন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং একটি সমতা ও ন্যায়পরায়ণতাভিত্তিক শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আইনগত, এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গণমাধ্যমসহ সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রত্যেক সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আত্মকেন্দ্রিকতার পরিবর্তে প্রত্যেক সদস্য হবেন সংবেদনশীল, আত্মত্যাগী, সাহসী ও সমাজ রূপান্তরে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
আত্মনির্ভরশীলতা ( Self-reliance): প্রত্যেক সদস্য পরিচালিত হবেন আত্মনির্ভরশীলতার চেতনার ভিত্তিতে। প্রত্যেকে বিশ্বাসী হবেন যে, জীবন এবং উন্নয়নের নিয়ন্তা হওয়ার অধিকার, দায়িত্ব এবং ক্ষমতা প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান। এই চেতনা ধারণ করে প্রত্যেক সদস্য নিজস্ব সৃজনশীলতা, দক্ষতা, সম্পদ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
অন্তর্ভুক্তিতা (Inclusiveness): শ্রেণি, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নারী এ নেটওয়ার্কের সদস্য হতে পারবেন।
নেটওয়ার্কিং (Networking): নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ক্ষুধামুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়া কারো একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গণজাগরণ। তাই সমমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে এই গণজাগরণ সৃষ্টিতে প্রত্যেক সদস্য কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। নেটওয়ার্কিং-এর পরিসর প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

অনুচ্ছেদ-৫
কার্যক্রম সম্প্রসারণ (Program Expansion):
তৃণমূল পর্যায় থেকে সম্ভাবনাময়ী নারীদের ফাউন্ডেশন কোর্সে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে একঝাঁক নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। সফলভাবে ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পন্ন এবং এর পরবর্তী কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন/উপজেলাসমূহে নীতিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন/উপজেলা কমিটি গঠন করা। এভাবে অধিকাংশ ইউনিয়ন/উপজেলায় কমিটি গঠনের পর নীতিমালা অনুযায়ী জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা।

অনুচ্ছেদ-৬
সাধারণ সদস্য পদ (General Membership):
‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ বিষয়ক তিনদিনের ফাউন্ডেশন কোর্স সফলভাবে সম্পন্নকারী এবং পরবর্তীতে নিয়মিত ফলো-আপ কর্মশালা/প্রশিক্ষণে ধারাবাহিকভাবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন এবং নেটওয়ার্কের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র মেনে চলার অঙ্গীকার করবেন তারা ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’-এর প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করবেন। প্রাথমিক সদস্য ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা।

অনুচ্ছেদ-৭
সাংগঠনিক কাঠামো (Organizational Structure):

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি

অনুচ্ছেদ-৮
সাংগঠনিক কাঠামো (Organizational Structure):
৮.১ ইউনিয়ন কমিটি (Union Committee):
কোনো ইউনিয়নে ন্যূনতম সাত জন সাধারণ সদস্য থাকলে, সেখানে ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হবে। একজন সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, একজন সহ-সম্পাদক, একজন অর্থ সম্পাদক এবং দু জন নির্বাহী সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। এর বাইরে অন্যরা সাধারণ সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। কমিটির মেয়াদ হবে দু বছর। ইউনিয়ন কমিটির সদস্যগণ প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হবেন। কোনো কারণে পদ শূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।

৮.১ উপজেলা কমিটি (Upazila Committee):
প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটি থেকে কমপক্ষে এক/দু’জন প্রতিনিধি উপজেলা কমিটির জন্য নির্বাচিত হয়ে আসবেন। নির্বাচিত ইউনিয়ন প্রতিনিধিসহ উপজেলা সদরে অবস্থানরত নারীনেত্রীদের নিয়ে উপজেলা কমিটি গঠিত হবে। একজন সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, একজন সহ-সম্পাদক, একজন অর্থ সম্পাদক এবং ষোল (১৬) জন নির্বাহী সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। এর বাইরে অন্যরা সাধারণ সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। কমিটির মেয়াদ হবে দু বছর। উপজেলা কমিটির সদস্যগণ প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হবেন। কোনো কারণে পদ শূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।

৮.২ জেলা কমিটি (District Committee):
প্রতিটি উপজেলা কমিটি থেকে কমপক্ষে এক/দু’জন প্রতিনিধি জেলা কমিটির জন্য নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এভাবে উপজেলা পর্যায় থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা প্রতিনিধিগণসহ জেলা সদরে অবস্থানরত নারীনেত্রীদের নিয়ে জেলা কমিটি গঠিত হবে। জেলা কমিটি ১১-১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। একজন সভাপতি, দু’জন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, দু’জন সহ-সম্পাদক, একজন অর্থ সম্পাদক এবং চার থেকে আট জন নির্বাহী সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। জেলা কমিটির মেয়াদ হবে দু বছর। জেলা কমিটির সদস্যগণ প্রতি দু’মাস অন্তর সভায় মিলিত হবেন। কোনো কারণে পদ শূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।

৮.৩ জাতীয় কমিটি (National Committee):
জাতীয় কমিটি হবে বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সর্বোচ্চ সাংগঠনিক কাঠামো। নেটওয়ার্কের মৌলিক নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তসমূহ এই কমিটিতে গৃহীত হবে। নেটওয়ার্কের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাসহ সামগ্রিক কার্যনির্বাহের জন্য জাতীয় কমিটির একটি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি থাকবে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মোট সদস্য ১১ জন। কোনো কারণে পদ শূন্য হলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবর্গ এবং প্রতি জেলা কমিটি থেকে একজন করে প্রতিনিধিসহ সর্বমোট ৭৫ জনের সমন্বয়ে জাতীয় কমিটি গঠিত হবে। জেলা কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক বা জেলা কমিটি মনোনীত অন্য কোনো সদস্য জাতীয় কমিটিতে জেলার প্রতিনিধিত্ব করবে।

বছরে একবার জাতীয় কমিটির সভা হবে। সাধারণভাবে ৩০ দিন এবং বিশেষ জরুরি অবস্থায় ১৫ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পরিষদের সভা ডাকা যাবে। জাতীয় কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর।

৮.৪ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি (Central Executive Committee):
জাতীয় কমিটির পক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি নেটওয়ার্কের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাসহ সামগ্রিক কার্যনির্বাহের জন্য মূল উদ্যোগী ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব পালন করবে। এই কমিটি সংগঠনের মৌলিক নীতিমালাসমূহের আলোকে সংগঠন পরিচালনার জন্য কর্মকৌশল ও কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। এই কমিটির সদস্য পরপর দুইবার/দুই মেয়াদ একই ব্যক্তি আসতে পারবেনা। একজন সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, একজন সহ-সম্পাদক, একজন কোষাধ্যক্ষ এবং ছয় জন নির্বাহী সদস্যের সমন্বয়ে সর্বমোট এগার (১১) সদস্যবিশিষ্ট হবে এই কমিটি। কোনো কারণে পদ শূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর নারীর ক্ষমতায়ন ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বা অন্য কোনো নির্ধারিত কর্মকর্তা পদাধিকার বলে বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যান্য পদসমূহের নেতৃবৃন্দ হবেন নির্বাচিত। প্রতি চার মাসে কমপক্ষে একবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হবে। সাধারণভাবে ১০ (দশ) দিন এবং জরুরি ক্ষেত্রে ৫ (পাঁচ) দিনের বিজ্ঞপ্তিতে সভা আহ্বান করা যাবে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর।

অনুচ্ছেদ-৯
জাতীয় সম্মেলন (National Conference):
সারাদেশের নারীনেত্রীদের নিয়ে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি তিন বছর পর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সম্মেলনের আয়োজন করবে। সাধারণভাবে দু মাস এবং জরুরি অবস্থায় ৩০ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা যাবে। নতুন জাতীয় কমিটি নির্বাচন, ঘোষণাপত্র ও পরিচালনার নীতিমালা সংশোধনীসহ গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তসমূহ জাতীয় সম্মেলনে গৃহীত হবে।

অনুচ্ছেদ-১০
কমিটিসমূহের কাজ (Roles and Responsibilities of the Committees):
সকল পর্যায়ের কমিটি জাতীয় সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণাপত্রের কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এছাড়াও জাতীয় কমিটি প্রয়োজন মতো নেটওয়ার্কের আদর্শের সাথে সংগতিপূর্ণ বিষয়ে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করবে এবং তা বাস্তবায়নে নিচের স্তরের কমিটিগুলো উদ্যোগী হবে।

ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটিগুলো স্থানীয় প্রয়োজন ও বাস্তবতা অনুযায়ী ঘোষণাপত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ বিষয়ে পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে সকল কার্যক্রম নিজস্ব পরিকল্পনা, নিজস্ব সম্পদ ও নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।

অনুচ্ছেদ-১১
নির্বাহী কমিটির সদস্যদের দায়দায়িত্ব (Roles and Responsibilities of Members of the Executive Members) সভাপতির দিক নির্দেশনা র্পূবক সাধারণ সম্পাদক নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সহ-সভাপতি, সভাপতির অনুপস্থিতিতে এবং সহ-সম্পাদক, সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। কোষাধ্যক্ষ অর্থ সংক্রান্ত হিসাব ও নথিপত্র সংরক্ষণসহ তহবিল পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন। সদস্যগণ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন।

অনুচ্ছেদ-১২
কমিটি অনুমোদন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Approval of the Comittees and Dicission Making):কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি জেলা কমিটিকে এবং জেলা কমিটি উপজেলা কমিটিকে ও উপজেলা কমিটি ইউনিয়ন কমিটিসমূহকে অনুমোদন দেবে। সংশ্লিষ্ট সকল কমিটির সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এ ব্যাপারে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

অনুচ্ছেদ-১৩
সদস্যপদ বাতিল/অব্যাহতি (Cancellation of Membership):
কোনো সদস্য নেটওয়ার্কের ঘোষণাপত্র ও সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা বিরোধী কাজ করলে, নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অথবা নেটওয়ার্কের মর্যাদা ও সুনাম ক্ষুণকারী কোনো কাজ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সর্বোচ্চ শাস্তি হবে নেটওয়ার্ক থেকে বহিষ্কার। অনুরূপভাবে নেটওয়ার্কের নীতি-আদর্শবিরোধী যে কোনো কার্যকলাপের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি যে কোনো স্থানীয় কমিটির স্বীকৃতি প্রত্যাহার করতে পারবে।

অনুচ্ছেদ-১৪
তহবিল গঠন ও তহবিল ব্যবস্থাপনা (Fund Raising and Fund Management):
নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তহবিল গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান, সদস্য ভর্তি ফি, সদস্য চাঁদা ও স্বেচ্ছা অনুদান ইত্যাদির মাধ্যমে তহবিল গঠিত হবে। এ জন্য প্রয়োজনে দাতা সংস্থার সহায়তাও গ্রহণ করা যেতে পারে। তহবিল পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল স্তরে ব্যাংক হিসাব থাকবে। কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদক এই তিন জনের যৌথ নামে ও স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হবে। বছর শেষে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিটি কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদন করতে হবে।

অনুচ্ছেদ-১৫
আন্তঃকমিটি সম্পর্ক (Inter Relationship among Comittees)
কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি একে অপরের সাথে পাস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে কার্যকর আন্তঃসম্পর্ক সৃষ্টি করবে। প্রত্যেক কমিটি ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’-এর চেতনা, আদর্শ ও মূলনীতির আলোকে স্থানীয় প্রয়োজনের নিরিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রত্যেক কমিটি পারস্পরিকভাবে মতামত বা পরামর্শ দিতে পারবে, কিন্তু কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা পরিহার করবে।

অনুচ্ছেদ-১৬
নীতিমালা সংশোধন ও ব্যাখ্যা (Amendment and Explanation of Guiding Policy):জাতীয় কমিটিতে আলোচনা ও অনুমোদনের মাধ্যমে এই নীতিমালা সংশোধন (সংযোজন ও বিয়োজন) করা যেতে পারে। কোনো বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি তা প্রদান করবে।

বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর
থিম সং (Theme song)

আমরা নারী বিকশিত নারী
আমরা সবাই
নতুন সমাজ গড়তে পারি ॥

আমরা চলেছি সামনে
আত্মশক্তি নিয়ে
সামনে যাবো এগিয়ে
সমাজের সব বাঁধা পেরিয়ে ॥

বৈষম্য বঞ্চনা দূর করার
আমরা শপথ নিয়েছি
সমাজের যত অশুভ বাধা
পিছনে ঠেলে চলেছি

সাথীরা এসো হাত রাখি হাতে
সামনে এগিয়ে যাবো এক সাথে
সমতার পৃথিবী গড়ব বলে
আমরা শপথ নিয়েছি ॥

*কথা ও সুর: মাহবুব আক্তার

পটভূমি :
‘‘নারীরাই ক্ষুধামুক্তির মূল চাবিকাঠি’’ এই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে ২০০৬ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ৩ দিনের একটি ফাউণ্ডেশন কোর্সের মধ্য দিয়ে নারী নেতৃত্ব বিকাশ কার্যক্রমের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে সাড়াদেশে এই কার্যক্রম চলতে থাকে। ক্রমবর্ধমান হারে নারীরা যুক্ত হতে থাকে এই কর্মসূচির সাথে। ফাউণ্ডেশন কোর্স পরবর্তী প্রতি মাসে দিনব্যাপী ফলোআপ কর্মশালার মাধ্যমে নেত্রীদের সক্রিয়তা, নেতৃত্বের দক্ষতা ও সামর্থ্য বিকাশের নিয়মিত ও ধারাবাহিক উদ্যোগ চলতে থাকে বছরব্যাপী। একইসাথে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নারী নেত্রীদের মধ্যে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা তীব্র হতে থাকে এবং তাদের মধ্যে গড়ে উঠে গভীর আন্ত:সম্পর্ক। এরই ধারাবাহিকতায় ৬ এপ্রিল ২০০৭ এ নেত্রীরা প্রথম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়েই  নেটওয়ার্কের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।
অনুচ্ছেদ-১
সংগঠনের নাম ও ঠিকানা: সংগঠনটির নাম হবে ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’। ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ’ এর প্রধান কার্যালয়টিকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সচিবালয় হিসেবে বিবেচিত হবে; যার বর্তমান ঠিকানা ৩/৭, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭, ফোন: ৮১১-২৬২২ এবং ৮১২-৭৯৭৫, ফ্যাক্স: ৮১১-৬৮১২। ওয়েবসাইট:http://www.bikoshitonari.net।
অনুচ্ছেদ-২
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: “বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক”-এর মূল লক্ষ্য হলো- নারী পুরুষের সমতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত আত্ননির্ভরশীল বাংলাদেশ সৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে একদল নারীকে সংগঠিত, ক্ষমতায়িত ও অনুপ্রাণিত করা।
নেটওয়ার্কটি হলো এমন একটি প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে তৃনমূলের নারীদের নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা, সারাদেশে নারী নেত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সমর্থন ও জোরদার করা, নারী পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের অবসান ঘটানো, পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধসহ নারীর প্রতি সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গণজাগরণ সৃষ্টির মাধ্যমে এমডিজি  (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) বা “ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য” বাস-বায়ন করা।
অনুচ্ছেদ-৩
সংগঠনের প্রতীক :
–   উত্তোলিত নারীর প্রতিবাদী হাত- বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে গতিশীল চক্রে নারীর উত্তোলন প্রতিবাদী হাত নারীর সুদীর্ঘ আন্দোলনের প্রতীক।

–   ব্যাগ পুস্তক নারীর জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রগতির প্রতীক।

–    উপরে নিচে দুটি গতিশীল চক্র বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের প্রতীক।
অনুচ্ছেদ-৪
নেটওর্য়াক পরিচালনার মূলনীতি:
সমতা : মানুষে-মানুষে ও নারী পুরুষে ‘সমতা’ – এই দর্শন ধারণ, লালন এবং সর্বক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটবে।
স্বয়ংক্রিয় নেতৃত্ব: নেতৃত্ব  হবে গতিশীল, স্বত:স্ফূর্ত ও স্বয়ংক্রিয়, যার উদ্দেশ্য হবে নারী তথা পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তর ঘটানো। এর প্রতিটি কার্যক্রম গৃহীত ও বাস্তবায়িত হবে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে ও স্থানীয় নেতৃত্বের উদ্যোগে।
স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা: নেটওয়ার্কের তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করা হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার চর্চা করা হবে। প্রত্যেক সদস্য পরিচালিত হবেন নিজস্ব তাগিদ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে।
দায়িত্ব ও অঙ্গীকার: প্রত্যেক সদস্য হবেন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং একটি সমতা ও ন্যায়পরায়ণতাভিত্তিক শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আইনগত এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গণমাধ্যমসহ সর্বক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রত্যেক সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আত্মকেন্দ্রিকতার পরিবর্তে প্রত্যেক সদস্য হবেন সংবেদনশীল, আত্মত্যাগী, সাহসী ও সমাজ  রূপান্তরে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
আত্মনির্ভরশীলতা: প্রত্যেক সদস্য পরিচালিত হবেন আত্মনির্ভরশীলতার চেতনার ভিত্তিতে। প্রত্যেকে বিশ্বাসী হবেন যে, জীবন এবং উন্নয়নের নিয়ন্তা হওয়ার অধিকার, দায়িত্ব এবং ক্ষমতা প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান। এই চেতনা ধারণ করে প্রত্যেক সদস্য নিজস্ব সৃজনশীলতা, দক্ষতা, সম্পদ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
অন্তর্ভুক্তিতা:  শ্রেণী, বয়স, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নারী এ নেটওয়ার্কের সদস্য হতে পারবেন।
নেটওয়ার্কিং : নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ক্ষুধামুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়া কারো একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গণজাগরণ। তাই সমমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে এই গণজাগরণ সৃষ্টিতে প্রত্যেক সদস্য কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। নেটওয়ার্কিং-এর পরিসরকে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করার উদ্যোগ করা হবে।
অনুচ্ছেদ-৫
কার্যক্রম সমপ্রসারণ:
প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে দুই-তিনজন করে ফাউন্ডেশন কোর্সে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে একঝাঁক নারীনেতৃত্ব সৃষ্টি করা হবে। সফলভাবে ফাউণ্ডেশন কোর্স সম্পন্ন এবং এর পরবর্তী কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন/ উপজেলাসমূহে নীতিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন/উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে। এভাবে অধিকাংশ ইউনিয়ন/উপজেলায় কমিটি গঠনের পর নীতিমালা অনুযায়ী  জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
অনুচ্ছেদ-৬
সাংগঠনিক কাঠামো :

image 1
অনুচ্ছেদ-৭
সাধারণ সদস্য পদ :
‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ বিষয়ক তিনদিনের ফাউণ্ডেশন কোর্স সফলভাবে সম্পন্নকারী এবং পরবর্তী মাসিক ফলোআপ কর্মশালা/প্রশিক্ষণে ধারাবাহিকভাবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং নেটওয়ার্কের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র মেনে চলার অঙ্গীকার করবে তারা বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করবেন। প্রাথমিক সদস্য ফি জনপ্রতি ২০ টাকা।
অনুচ্ছেদ-৮
সাংগঠনিক কাঠামো :
৮.১: ইউনিয়ন কমিটি:
কোন ইউনিয়নে ন্যূনতম ৭ জন সাধারণ সদস্য থাকলে, সেখানে ইউনিয়ন কমিটি  গঠিত হবে। একজন সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, একজন সহ-সম্পাদক, একজন অর্থ সম্পাদক এবং দুইজন নির্বাহী সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। এর বাইরে অন্যান্যরা সাধারণ সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর। ইউনিয়ন কমিটি প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হবে। কোন কারণে পদশূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।
৮.১: উপজেলা কমিটি :
প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটির প্রতিনিধিসহ সর্বোচ্চ ২১ জন সদস্য নিয়ে উপজেলা কমিটি গঠিত হবে। একজন সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, একজন সহ-সম্পাদক, একজন অর্থ সম্পাদক এবং ১৬ জন নির্বাহী সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। এর বাইরে অন্যরা সাধারণ সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর। উপজেলা কমিটি প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হবে। কোন কারণে পদশূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।
৮.২ জেলা কমিটি :
প্রতিটি উপজেলা কমিটি থেকে কমপক্ষে এক/দুইজন প্রতিনিধি জেলা কমিটির জন্য নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এভাবে উপজেলা পর্যায় থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা প্রতিনিধিগণসহ জেলা সদরে অবস্থানরত নারীনেত্রীদের নিয়ে জেলা কমিটি গঠিত হবে। জেলা কমিটি  ১১- ১৫ জন  সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। একজন সভাপতি, দুইজন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, দুইজন সহ-সম্পাদক, একজন অর্থ সম্পাদক এবং চার থেকে আটজন নির্বাহী সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। জেলা কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর। জেলা কমিটি প্রতি দু’মাস অন্তর সভায় মিলিত হবে। কোন কারণে পদশূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।
৮.৩: জাতীয় কমিটি:
জাতীয় কমিটি হবে বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক কাঠামো। নেটওয়ার্কের মৌলিক নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত সমূহ এই কমিটিতে গৃহীত হবে। নেটওয়ার্কের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাসহ সামগ্রিক কার্যনির্বাহের জন্য জাতীয় কমিটির একটি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি থাকবে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মোট সদস্য এগারজন। কোন কারণে পদশূন্য হলে কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবর্গ এবং প্রতি জেলা কমিটি থেকে একজন করে প্রতিনিধিসহ সর্বমোট ৭৫ জনের সমন্বয়ে জাতীয় কমিটি গঠিত হবে। জেলা কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক বা জেলা কমিটি মনোণীত অন্য কোন সদস্য জাতীয় কমিটিতে জেলার প্রতিনিধিত্ব করবে।
বছরে একবার জাতীয় কমিটির সভা হবে। সাধারণভাবে ৩০ দিন এবং বিশেষ জরুরি অবস্থায় ১৫ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পরিষদের সভা ডাকা যাবে। জাতীয় কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর।
৮.৪: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি :
জাতীয় কমিটির পক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি নেটওয়ার্কের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাসহ সামগ্রিক কার্যনির্বাহের জন্য মূল উদ্যোগী ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব পালন করবে। এই কমিটি সংগঠনের মৌলিক নীতিমালাসমূহের আলোকে সংগঠন পরিচালনার জন্য কর্মকৌশল ও কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। একজন সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি, একজন সম্পাদক, একজন সহ-সম্পাদক, একজন কোষাধ্যক্ষ এবং ছয় জন নির্বাহী সদস্যের সমন্বয়ে সর্বমোট এগার সদস্যবিশিষ্ট হবে এই কমিটি। কোন কারণে পদশূন্য হলে কমিটি তা পূরণ করতে পারবে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের নারী উন্নয়ন সেল এর দায়িত্বপ্রাপ্ত বা অন্য কোন নির্ধারিত কর্মকর্তা পদাধিকার বলে বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যান্য পদসমূহের নেতৃবৃন্দ হবেন নির্বাচিত। প্রতি চার মাসে কমপক্ষে একবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হবে। সাধারণভাবে ১০ দিন এবং জরুরি ক্ষেত্রে পাঁচ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে সভা আহবান করা যাবে।
অনুচ্ছেদ-৯
জাতীয় সম্মেলন :
সারাদেশের নারী নেত্রীদের নিয়ে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি দুই বছর পর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সম্মেলনের আয়োজন করবে। সাধারণভাবে দুইমাস এবং জরুরি অবস্থায় ৩০ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় সম্মেলন আহবান করা যাবে। নতুন জাতীয় কমিটি নির্বাচন, ঘোষণাপত্র ও পরিচালনার নীতিমালা সংশোধনীসহ গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত সমূহ জাতীয় সম্মেলনে গৃহীত হবে।
অনুচ্ছেদ-১০
কমিটিসমূহের কাজ:
সকল পর্যায়ের কমিটি জাতীয় সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণাপত্রের কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এছাড়াও জাতীয় কমিটি প্রয়োজনমতো নেটওয়ার্কের আদর্শের সাথে সংগতিপূর্ণ বিষয়ে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করবে এবং তা বাস্তবায়নে নীচের স্তরের কমিটিগুলো উদ্যোগী হবে।
ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটিগুলো স্থানীয় প্রয়োজন ও বাস্তবতা অনুযায়ী ঘোষণাপত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ বিষয়ে পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে সকল কার্যক্রম নিজস্ব পরিকল্পনা, নিজস্ব সম্পদ  ও নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।
অনুচ্ছেদ-১১
নির্বাহী কমিটির সদস্যদের দায়দায়িত্ব :
সভাপতি, সংগঠন প্রধান এবং সম্পাদক, নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সহ-সভাপতি, সভাপতির অনুপস্থিতিতে এবং সহ-সম্পাদক, সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। কোষাধ্যক্ষ অর্থ সংক্রান্ত হিসাব ও নথিপত্র সংরক্ষণসহ তহবিল পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন। সদস্যগণ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সংশ্ল্লিষ্ট সকলকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন।
অনুচ্ছেদ-১২
কমিটি অনুমোদন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ:
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি জেলা কমিটিকে এবং জেলা কমিটি উপজেলা কমিটিকে ও উপজেলা কমিটি ইউনিয়ন কমিটিসমূহকে অনুমোদন দেবে। সংশ্লিষ্ট সকল কমিটির সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এ ব্যাপারে কোন জটিলতার সৃষ্টি হলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
অনুচ্ছেদ-১৩
সদস্যপদ বাতিল/অব্যাহতি:
কোন সদস্য নেটওয়ার্কের ঘোষণাপত্র ও সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা বিরোধী কাজ করলে, নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অথবা নেটওয়ার্কের মর্যাদা ও সুনাম ক্ষুন্নকারী কোন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সর্বোচ্চ শাস্তি হবে নেটওয়ার্ক থেকে বহিষ্কার। অনুরূপভাবে নেটওয়ার্কের নীতি-আদর্শবিরোধী যে কোন কার্যকলাপের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি যে কোন স্থানীয় কমিটির স্বীকৃতি প্রত্যাহার করতে পারবে।
অনুচ্ছেদ-১৪
তহবিল গঠন ও তহবিল ব্যবস্থাপনা :
নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তহবিল গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান, সদস্য ভর্তি ফি, সদস্য চাঁদা, স্বেচ্ছা অনুদান ইত্যাদির মাধ্যমে তহবিল গঠিত হবে। এ জন্য প্রয়োজনে দাতা সংস্থার সহায়তাও গ্রহণ করা যেতে পারে । তহবিল পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল স্তরে ব্যাংক হিসাব থাকবে। কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও অর্থসম্পাদক এই তিনজনের যৌথ নামে ও স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হবে। বছর শেষে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিটি কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদন করতে হবে।
অনুচ্ছেদ-১৫
আন্ত:কমিটি সম্পর্ক :
কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি একে অপরের সাথে পাস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে কার্যকর আন্ত:সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। প্রত্যেক কমিটি ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের’ চেতনা, আদর্শ, মূলনীতির আলোকে স্থানীয় প্রয়োজনের নিরিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রত্যেক কমিটি পাস্পারিকভাবে মতামত বা পরামর্শ দিতে পারবে কিন্তু কোন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত  চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা পরিহার করবে।
অনুচ্ছেদ-১৬
নীতিমালা সংশোধন ও ব্যাখ্যা :
জাতীয় কমিটিতে আলোচনা ও অনুমোদনের মাধ্যমে এই নীতিমালা সংশোধন (সংযোজন ও বিয়োজনসহ) করা যেতে পারে। কোন বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি তা প্রদান করবে।

বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর
*দলীয় সঙ্গীত
আমরা নারী বিকশিত নারী
আমরা সবাই
নতুন সমাজ গড়তে পারি ॥

আমরা চলেছি সামনে
আত্মশক্তি নিয়ে
সামনে যাবো এগিয়ে
সমাজের সব বাঁধা পেরিয়ে ॥

বৈষম্য বঞ্চনা দূর করার
আমরা শপথ নিয়েছি
সমাজের যত অশুভ বাঁধা
পিছনে ঠেলে চলেছি ॥

সাথীরা এসো হাত রাখি হাতে
সামনে এগিয়ে যাবো এক সাথে
সমতার পৃথিবী গড়ব বলে
আমরা শপথ  নিয়েছি  ॥
*কথা ও সুর : মাহবুব আক্তার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.