র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৪ উদযাপিত

untitled

৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছর ‘নারীর প্রতি সমতা, সমৃদ্ধ জাতির নিশ্চয়তা’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ ও জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম সমন্বিতভাবে বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক- এর সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
সকাল ৯.০০টায় জাতীয় যাদুঘরের (শাহবাগ) সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। বেলুন উড়িয়ে র‌্যালির উদ্বোধন করেন জনাব রাশেদা কে. চৌধুরী- সাবেক উপদেষ্টা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাহী পরিচালক, গণস্বাক্ষরতা অভিযান। র‌্যালিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধি, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সদস্য, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সদস্য, শিক্ষক,অভিভাবক এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৮০০ জন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট-এ গিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালি শেষে সকাল ১০:০০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট-এর সেমিনার রুমে আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রওনক জাহান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর সম্পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. নাজমুস সাহার সাদিক ও নারী উদ্যোক্তা জনাব তাজিমা হোসেন মজুমদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্বে জনাব রওশন আরা বেগম- ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (সিআইডি), বাংলাদেশ পুলিশ এবং জনাব রেহানা পারভীন- প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড় এবং ফুটবল কোচÑ এ দু জন ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। একই অনুষ্ঠানে ‘নারীর কথা-৯’ নামক জার্নাল-এর মোড়ক উম্মোচন করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে ফোরাম-এর সম্পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ‘বাংলাদেশের কন্যাশিশু ও নারীদের সামনে যেসব বাধা রয়েছে তা দূর করে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করাই হবে নারী দিবসের অঙ্গীকার।’ তিনি আরও বলেন, নারী দিবস প্রতিষ্ঠার দেড়শ বছর পরও এখনও নারীরা তাদের সব অধিকার পাচ্ছে না। অথচ নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই একটি সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তোলা সম্ভব।

ড. রওনক জাহান বলেন, ‘নারী-পুরুষ সমতা শুধুমাত্র নারীর জন্য নয়, বরং পুরো জাতির সমৃদ্ধির জন্যই প্রয়োজন। নারীরা যদি পুরুষের সমান সুযোগ-সুবিধা, অধিকার ও সমান মজুরি পায়, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে যাবো। কিন্তু আমাদের নারীরা এখনও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তারা কর্মক্ষেত্রে সমান মজুরি না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। এ কারণে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা ভাল করেছি এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে আমরা সবাই মিলে সংঘব্ধভাবে যদি নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হই, তাহলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারবো।

রওশন আরা বেগম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস হলোÑ নারী-পুরুষের মেলবন্ধনের দিন। নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হবে আজকের দিবসের অঙ্গীকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের নারীদের মধ্যে আত্মশক্তি জাগ্রত করতে হবে। লেখাপড়া করে নিজেদের যোগ্য করতে তুলতে হবে। নারীদের মধ্যে এ বিশ্বাস জাগ্রত করতে হবে যে- আমরাও পারি।’

রেহানা পারভীন বলেন, ‘নারী-পুরুষ সমতা অর্জনের জন্য নারীকে ঘরের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।’ এজন্য সবার আগে নারীকে শিক্ষিত হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে, যুগে যুগে নারীরা পুরুষের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে বর্তমানে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। আমরা পুরুষরা যদি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নারীর প্রতি বৈষম্য না করি তাহলেই নারীরা তাদের অধিকার পাবে।
ফোরাম-এর সভাপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা হলো শিশুবিবাহ। যেহেতু শিশুবিবাহের শিকার অপুষ্ট ও অল্প শিক্ষিত কিশোরীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই গর্ভধারণ করেন, তাই সমাজে একটি অপুষ্টির ‘দুষ্টচক্র’ সৃষ্টি হয়, যার মাশুল ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে পুরো জাতিকেই বহন করতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যেসব শিশু স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, পরবর্তী জীবনে তারা অধিক হারে হৃদরোগ ও বহুমূত্ররোগে আক্রান্ত হয়।’ তাই জাতির সমৃদ্ধির স্বার্থেই নারীর প্রতি বৈষম্য রোধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।