বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন-২০১৪ অনুষ্ঠিত

wlc_1মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি বলেছেন, ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীদের এগিয়ে আসা প্রমাণ করে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি ছয় শতাংশের ওপরে, আজকে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা নেই, খাদ্যে স্বয়ংস্বপূর্ণতা অর্জন করেছে। সর্বোপরি মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাসসহ এমডিজি অর্জনে আমাদের সাফল্য ইর্ষণীয়। আর এসব ক্ষেত্রে নারীদের রয়েছে একটি বড় অবদান। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে নারীদের উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকে উল্লেখ করেছেন।’ তিনি আজ সকাল ১৩ নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০.০০টায় ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত ইন্সিটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ-এর নারী নেতৃত্ব বিকাশ কর্মসূচির আওতাধীন বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন-২০১৪-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘নারীদের যেখানেই সুযোগ দেয়া হচ্ছে সেখানেই তারা যোগ্যতার প্রমাণ করছে। আজকে দেশের রাজনীতিসহ সবক্ষেত্রে নারীরা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু একটি গোষ্ঠী নারীদের উন্নয়ন চায় না। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা এগিয়ে আসেন। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করুন। তাহলেই সমাজের উন্নয়ন হবে, রাষ্ট্রের উন্নয়ন হবে।’

সারাদেশের সহস্রাধিক বলিষ্ঠ নারীনেত্রী অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি রাশেদা আখ্তার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওসা স্কোজস্ট্রোম ফেল্ট- প্রেসিডেন্ট ও সিইও, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট (গ্লোবাল), ড. সাঈদা হামিদ- সদস্য, পরিকল্পনা কমিশন, ভারত, ড. রওনক জাহান- সম্মানিত ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ড. গোলাম মুরশিদ- বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক, ড. বদিউল আলম মজুমদার- গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এবং ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার নেত্রী প্রমুখ।

সম্মেলনে মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান- নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা) এবং ব্যারিস্টার সারা হোসেন- অনারারি পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)- কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

ওসা স্কোজস্ট্রোম ফেল্ট বলেন, ‘আমরা নারীদের জন্য একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যদিও এটা কঠিন কাজ, কিন্তু এটা আমাদের করতে হবে। যদি আমরা নারীদের জন্য শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারি তাহলে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে। একইসাথে আমাদের নারীদের সংগঠিত করতে হবে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য অভাবনীয় সাফল্য অপেক্ষা করছে। কারণ আজ বাংলাদেশের নারীরা তাদের ও সমাজের অন্যান্যদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জেগে উঠেছে। এভাবে সবাই যদি নিজ অবস্থান থেকে জেগে ওঠে এবং আমরা যদি সবাই যদি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি তাহলে একটি আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’ তিনি বলেন, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে সারাদেশের প্রায় সাত হাজার নারী ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন, যারা তৃণমূল পর্যায়ে স্বেচ্ছায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।’

ড. গোলাম মুরশিদ বলেন, ‘কিছুকাল আগেও মনে করা হতো যে, নারীরা লেখাপড়া করলে পরিবার ও সমাজের অকল্যাণ হয়। বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। অথচ এখন নারীরা পড়াশুনায় এগিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি পরীক্ষায় নারীরা ভাল করছে। কিন্তু একইসাথে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, এটা দেখলেই গর্ভে বুক ফুল ওঠে। নারীরা যদি উন্নয়ন কাজে যুক্ত হয়, তাহলে আমাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে ভারত থেকে বাংলাদেশ ভাল করছে। আপনারা, তথা নারীরা যদি আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।’

ড. রওনক জাহান বলেন, ‘মেয়েদের সমস্যা শুধু মেয়েদের সমস্যা নয়। এটা সমাজেরও সমস্যা। তাই নারীদের এগিয়ে নিতে হলে পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে। তবে নারী নির্যাতন সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। তাই সম্মিলিতভাবেই এ সমস্যা উত্তরণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার বিয়ের বয়স কমানোর প্রস্তাব করেছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা বাল্যবিবাহকে আরও উৎসাহিত করবে।’

সাইদা হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের সঠিক পথেই আছে। আপনারা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করছেন এজন্য আপনাদের অভিনন্দন। আমি আপনাদের অভিজ্ঞতা আমার নিজ দেশে গিয়ে বিভিন্ন সভায় বিনিময় করবো।’

সম্মেলনে তৃণমূল থেকে আগত নারীনেত্রীগণ জাতিসংঘের উন্নয়ন সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা-এমডিজি অর্জনে নিজ নিজ ও দলগত সফলতা তুলে ধরেন, সংগ্রামের অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময় এবং একইসঙ্গে ভবিষ্যত কর্মকৌশল নির্ধারণে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

এছাড়া তৃণমূলে নারী নেতৃত্ব বিকাশ কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের সচেতন, সক্রিয় ও সংগঠিত করে একটি আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। উপস্থিত নারীনেত্রীগণ উক্ত ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সবশেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।