নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ

ভূমিকা

যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি যে বৈষম্য চলে আসছে তা দুর করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নারীর অধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ করে তুলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র্র প্রস্তুতের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে “বিশ্ব নারী বর্ষ” হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য আরও কার্যকর ও দীর্ঘময়োদী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়৷  এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় নারীর প্রতি সব ধরণের বৈষম্য দূরীকরণ বিষয়ক সনদ বা কনভেনশন৷ ইংরজেীতে একে বলা হয়েছে Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women বা সংক্ষপে CEDAW (সিডও)৷ বলা যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরষিদে সিডও নামের এই সনদ বা কনভনেশন গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে নারীর জন্য সমান অধকিারের লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ৷
বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ , নারী জাতির মর্যাদা বিষয়ক কমিশন এবং সাধারণ পরিষদের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও পর্যালোচনার সফল পরিনতিতে এই সনদ গৃহীত হয়৷ সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার ভিত্তিতে বিবাহিতা-অবিবাহিতা নির্বিশেষে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক ইত্যাদি সকল বিষয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সকল বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন করে বৈষম্যমূলক আচরণের অবসানের জন্য সনদে আহে্বান জানানো হয়ছে ৷ এ ছাড়া কনভেনশনে পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা স্থাপন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য এবং প্রচলিত যেসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারা বৈষম্যকে স্থায়ি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সেগুলো পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে এই সুপারশিমালায় রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নারীর সমান অধিকার ; শিক্ষায় সমান সুবিধা ও পাঠ্যক্রম অনুসরণে সমান সুযোগ; নিয়োগদান ও বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীণতা  এবং বিবাহ ও মাতৃত্বের ক্ষেত্রে চাকুরীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান ৷ সনদে পারিবারিক জীবনে নারীর পাশাপাশি পুরুষের সমান দায়িত্বের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে৷
১৯৮০ সালের ১লা মার্চ সনদে স্বাক্ষর শুরু হয় এবং এটি ১৯৮১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়৷ ইতোমধ্যে ১৫০টির ও অধিক দেশে এই কনভেনশন অনুমোদন করে স্বাক্ষরদান করেছে ৷ বাংলাদেশে এই দলিল অনুমোদন করে স্বাক্ষর করেছে ১৯৮৪ সালের ৬ই নভেম্বর৷
এই কনভনেশন বা সিডও দলিলের মূল মর্মবাণী হল সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবকিাশে যুগ যুগ ধরে নারী যে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে সেই ভূমিকার যথাযথ স্বীকৃতি এবং সার্বিকভাবে গোটা বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতা স্থাপন করা৷ এর জন্য আইন প্রণয়ন, প্রচলিত আইনের সংস্কার, আইন প্রয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ইত্যাদি যা কিছু প্রয়োজন, সনদে শরীক রাষ্ট্রগুলো তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণে  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷

অনুচ্ছেদ-১
এই কনভনেশন, “নারীর প্রতি বৈষম্য” বলতে বুঝাবে পুরুষ নারী ভিত্তিতে যে কোন পার্থক্য, বঞ্চনা অথবা বিধি নিষেধ যার মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক অথবা অন্য যে কোন ক্ষেত্রে মৌলিক স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া, তা ভোগ করা অথবা বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে নারীর দ্বারা তার ব্যবহার বা চর্চা, ক্ষতিগ্রস্থ অথবা দরকার মত প্রভাব বা উদ্দশ্যে রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ – ২
এই কনভেনশনে রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর প্রতি সকল বৈষম্যের নিন্দা করে এবং উপযুক্ত সকল উপায় ও অবিলম্বে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের একটি নীতি অনুসরণে সম্মত হয়৷ এই লক্ষ্যে তারা যা যা করবে বলে অংগীকার করে তা হচ্ছে –

ক) পুরুষ ও নারীর সমতার নীতি তাদের জাতীয় সংবিধান অথবা অন্য কোন উপযুক্ত আইনে ইতোমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করা এবং আইনের মাধ্যমে ও অন্যান্য উপযুক্ত উপায়ে এই নীতির প্রকৃত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা;
খ) নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য নিষিদ্ধ করে উপযুক্ত ক্ষেত্রে আইন মানতে বাধ্য করার ব্যবস্থাসহ যথোপযুক্ত আইনগত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
গ) পুরুষের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে নারীর অধিকারসমূহের সুরক্ষা আইনগতভাব প্রতিষ্ঠা করা এবং উপযুক্ত জাতীয় আদালত ও অন্যান্য সরকারী প্রতষ্ঠিানের মাধ্যমে যে কোন বৈষ্যম্য থেকে নারীকে রক্ষা কার্যকরভাব নিশ্চিত করা;
ঘ) নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক যে কোন কর্মকান্ডে নিয়োজিত হওয়া থেকে বিরত থাকা এবং সরকারী কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যাতে এই দায়িত্ব অনুসারে কাজ করে তা নিশ্চিত করা;
ঙ) কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যাতে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সকল   উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
চ) প্রচলিত যেসব আইন, বিধি, প্রথা ও অভ্যাস নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে সেগেুলো পরিবর্তন অথবা বাতিল করার উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
ছ) যে সব জাতীয় দন্ড বিধান নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে সেগুলো বাতিল করা৷

অনুচ্ছেদ – ৩
পুরুষের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে মানবাধিকার ও মৌলিক অধকিারসমূহ প্রয়োগ ও ভোগে নারীকে নিশ্চয়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে এবং নারীর পূর্ণ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রপক্ষসমূহ সকল ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷

অনুচ্ছেদ – ৪
পুরুষ ও নারীর মধ্যে প্রকৃত প্রস্তাবে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে,রাষ্ট্রপক্ষসমূহ কোন অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা এই কনভেনশনে বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী বৈষম্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে না৷  তবে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ কোন ভাবেই অসম অথবা পৃথক মান বজায় রাখার ফল হিসেবে যুক্ত হবে না; সুযোগ ও আচরণের সমতার লক্ষ্য অর্জিত হলে এসব ব্যবস্থা রহিত করা হবে৷
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ মাতৃত্ব রক্ষার লক্ষ্যে এই কনভনেশনে বর্ণিত ব্যবস্থাসহ কোন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা বৈষম্যমূলক বলে বিবেচিত হবে না৷
অনুচ্ছেদ – ৫
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নিচে যেসব বিষয় বর্ণনা করা হয়ছে সেগুলোর জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে :
(ক) পুরুষ ও নারীর মধ্যে কেউ উত্কৃষ্ট অথবা কেউ নিকৃষ্ট এই ধারণার ভিত্তিতে কিংবা পুরুষ ও নারীর চিরাচরিত ভূমিকার ভিত্তিতে যেসব কুসংস্কার, প্রথা ও অভ্যাস গড়ে উঠেছে সেগুলো দূর করার লক্ষ্যে পুরুষ ও নারীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচরণের ধরন পরিবর্তন করা;
খ) মাতৃত্বকে একটা সামাজিক কাজ হিসেবে যথাযথভাবে বিবেচনা এবং সকল ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থই মূল বিবেচ্য বিষয়- এ কথা স্মরণ রেখে সন্তান-সন্তুতির লালন পালন ও উন্নয়ন এবং পুরুষ ও নারীর অভিন্ন দায়িত্বের স্বীকৃতির বিষয় যাতে পারিবারিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা নিশ্চিত করা৷

অনুচ্ছেদ – ৬
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীকে নিয়ে সব ধরনের অবৈধ ব্যবসা এবং দেহ ব্যবসার আকারে নারীকে শোষণ দমন করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযু্ক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছদে – ৭
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ দেশের রাজনৈতিক ও জনজীবনে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিশেষ করে পুরুষের সঙ্গে সমান শর্তে যে সব ক্ষেত্রে নারীর অধিকার নিশ্চিত করবে সে গুলো হচ্ছে-
ক) সকল নির্বাচন ও গণভোটে ভোটদান এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংস্থাসমূহের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া;
খ) সরকারী নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে অংশ গ্রহণ এবং সরকারী পদে অধিষ্ঠিত হওয়া ও সরকারের সকল পর্যায়ে সরকারী কাজকর্ম সম্পাদন;
গ) দেশের জনজীবন ও রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারী সংস্থা ও সমিতিসমূহের কাজে অংশগ্রহণ৷

অনুচ্ছেদ – ৮
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পুরুষের সঙ্গে সমান শর্তে এবং কোন রকম বৈষম্য ছাড়াই নারীর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ নিজ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের কাজ কর্মে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷

অনুচ্ছেদ – ৯
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন অথবা তা বজায় রাখতে নারীকে পুরুষের মতই সমান অধিকার প্রদান করবে৷ রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে নিশ্চিত করবে যে একজন বিদেশেীর সঙ্গে বিবাহ অথবা বিবাহ চলাকালে স্বামীর জাতীয়তা পরিবর্তনের ফল স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে স্ত্রীর জাতীয়তা পরিবর্তিত হবেনা, তাকে জাতীয়তাহীন করবেনা অথবা জাতীয়তা গ্রহণে তাকে বাধ্য করা হবে না৷
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীকে তাঁর সন্তান-সন্তুতির জাতীয়তার ক্ষেত্রে পুরুষের মতই সমান অধকিার প্রদান করবে৷

অনুচ্ছেদ – ১০
শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার উদ্দশ্যে, বিশেষ করে পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে যেসব বিষয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেগেুলো হচ্ছে-
ক) কর্মজীবন ও বৃত্তিমূলক নির্দেশণা, পল্লী ও শহরাঞ্চলে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ ও ডিপ্লোমা লাভের সুযোগের জন্য একই শর্তাবলী;স্কুল-পূর্ব, সাধারণ, কারিগরী, পেশাগত ও উচ্চতর কারগরী শিক্ষা, সেই সাথে সকল ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে এই সমতা নিশ্চিত করা;
খ) সহশিক্ষা এবং পুরুষ ও নারীর ভুমিকা সম্পর্কিত চিরাচরিত ধারণা দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক অন্য ধরনের শিক্ষা উত্সাহিত করার মাধ্যমে, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক ও বিদ্যালয় কর্মসূচী সংশোধন এবং উপযুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে সকল পর্যায়ে এবং সকল ধরনের শিক্ষায় পুরুষ ও নারীর ভূমিকা সম্পর্কিত চিরাচরিত যে কোন ধারণা দূরীকরণ;
গ) বৃত্তি এবং অন্যান্য শিক্ষা মঞ্জুরী লাভবান হওয়ার একই সুযোগ প্রদান;
ঘ) বয়স্ক  ও  কর্মমূলক শিক্ষা কর্মসূচীসহ শিক্ষা অব্যাহত রাখার কর্মসূচী, বিশেষ করে পুরুষ ও নারীর মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান যে কোন দূরত্ব স্বল্পতম সম্ভব সময়ের মধ্যে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রণীত কর্মসূচীসমূহে সুযোগ লাভের একই সুবিধা প্রদান;
ঙ) ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগরে হার কমানো এবং যসেব বালকিা ও মহলিা নর্দিষ্টি সময়রে আগইে বদ্যিালয় ত্যাগ করেেছন তাদরে জন্য বভিন্নি কর্মসূচীর আয়োজন;
চ) খলোধূলা ও শারীরকি শক্ষিায় সক্রয়িভাব েঅংশ গ্রহণরে জন্য একই সুযোগ প্রদান;
ছ) পরবিাররে স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নশ্চিতি করত েসহায়তা করার উদ্দশ্যে েপরবিার পরকিল্পনা সম্পর্কতি তথ্য ও পরামর্শসহ নর্দিষ্টি শক্ষিামূলক তথ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি৷

অনুচ্ছেদ – ১১
১. পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে তাদের একই অধিকার, বিশেষ করে নিম্নে বর্ণিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্ব প্রকার নিয়োগদানের ক্ষেত্রে শরীক রাষ্ট্রসমূহ নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে-
ক) সকল মানুষের মৌলিক কর্মসংস্থানের অধিকার;
খ) কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে একই বাছাই মান প্রযোগসহ একই নিয়োগ সুবিধা পাওযার অধিকার;
গ) পেশা ও চাকুরী স্বাধীনভাবে বেছে নেয়ার অধিকার; পদোন্নতি চাকুরীর নিরাপত্তা এবং চাকুরীর সকল সুবিধা ও শর্ত ভোগ করার অধিকার এবং শিক্ষানবিস হিসেবে প্রশিক্ষণ, উচ্চতর বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং পুনঃপ্রশিক্ষণ গ্রহণের অধিকার ;
ঘ) বিভিন্ন সুযোগ সুবধিাসহ সমান পারিশ্রমিক, একই মানের কাজের ক্ষেত্রে একই আচরণ, সেই সাথে কাজের মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমান আচরণ পাওয়ার অধিকার ;
ঙ) বিশেষ করে অবসর গ্রহণ, বেকারত্ব, অসুস্থতা, অক্ষমতা ও বার্ধক্য এবং কাজ করার অন্যান্য অক্ষমতার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার এবং সেই সাথে সবেতন ছুটি ভোগের অধিকার;
চ) সন্তান জণ্মদান প্রক্রিয়া নিরাপদ রাখাসহ স্বাস্থ্য এবং কাজের পরিবেশে নিরাপত্তার অধিকার৷

২. বিবাহ অথবা মাতৃত্বের কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য রোধ এবং তাঁদের কাজ করার কার্যকর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরীক রাষ্ট্রসমূহ যে সকল বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেগুলো হচ্ছে-
ক) গর্ভধারণ অথবা মাতৃত্ব সংক্রান্ত ছুটির কারণে বরখাস্ত এবং বৈবাহিক অবস্থার ভিত্তিতে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা;
খ) বেতনসহ ছুটি অথবা পূর্বেকার চাকুরী জ্যেষ্ঠতা অথবা সামাজিক ভাতাদি না হারিয়ে তুলনাযোগ্য সামাজিক সুবিধাদিসহ মাতৃত্ব সংক্রান্ত ছুটি প্রবর্তন করা;
গ) বিশেষ করে একটি শিশু পরিচর্যা সুবিধা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের মাধ্যমে পিতা-মাতাদেরকে তাদের কাজের দায়িত্বের সাথে পারিবারিক দায়িত্ব সংযুক্ত করে নাগরিক জীবনে অংশগ্রহণে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়ক সামাজিক সার্ভিসের ব্যবস্থাকে উত্সাহিত করা;
ঘ) গর্ভাবস্থায় যে ধরনের কাজ নারীর জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমানিত,গর্ভকালে তাদেরকে সে ধরনের কাজ থেকে বিশেষ ভাবে ব্যবস্থা করা;

৩. এই ধারায় বর্ণিত  বষিয়াদি সম্পর্কে রক্ষামূলক আইন, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের আলোকে সময় সময় পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনমত সংশোধন,  বাতিল অথবা সম্প্রসারণ করা হবে৷

অনুচ্ছেদ – ১২
১. পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে,পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত সার্ভিসসহ স্বাস্থ্য পরিচর্যামূলক সার্ভিস পাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরীক রাষ্ট্রসমূহ স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
২. একই ধারার অনুচ্ছেদ ১ এর বিধান ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষসমূহ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সার্ভিস প্রদান করে সেইেসাথে গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে মায়ের দুগ্ধদান চলাকালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে গর্ভকাল, সন্তান জণ্মদানের ঠিক আগে এবং সন্তান জণ্মদানের পরে মহিলাদের উপযুক্ত সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করবে৷
অনুচ্ছেদ – ১৩
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে একই অধিকার, বিশেষ করে নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অপরাপর ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে;
ক) পারিবারিক কল্যাণের অধিকার;
খ)  ব্যাংক ঋণ, বন্ধক ও অন্যান্য আর্থিক ঋণ গ্রহণের অধিকার;
গ) বিনোদনমূলক কর্মকান্ড, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক জীবনের সকল বিষয়ে অংশগ্রহণের অধিকার৷
অনুচ্ছেদ – ১৪
১) রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পল্লী এলাকার মহিলারা যেসব বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হন সেগুলো এবং দৈনন্দিন জীবনে তাঁদের যেসব কাজ উপার্জন হিসেবে গণ্য করা হয় না সেসব কাজ এবং পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ যেসব ভূমিকা পালন করেন সেগুলো বিবেচনা করবে এবং পল্লী এলাকার নারীদের জন্য এই সনদের বিধান প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷

২) রাষ্ট্রপক্ষসমূহ, পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে পল্লী উন্নয়ন কর্মকান্ডে নারীর অংশ গ্রহণ ও তা থেকে তাদরে কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, পল্লী এলাকায় নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিশেষ করে এসব নারীর জন্য নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করবে-
ক) সকল পর্যায় উন্নয়ন বিষয়ে তথ্য, পরামর্শ ও সেবালাভসহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা  সুবিধা লাভের সুযোগ পাওয়া;
খ) পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে তথ্য, পরামর্শ ও সেবালাভসহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা লাভের সুযোগ পাওয়া;
গ) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী থেকে সরাসরি লাভবান হওয়া;
ঘ) উপযোগী শিক্ষা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণসহ আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সকল ধরনের প্রশক্ষিণ ও শিক্ষা এবং সেইসাথে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তাদের কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল সামাজিক ও সম্প্রসারণ সার্ভিসের সুবিধা লাভ করা ;
ঙ) কর্মসংস্থান অথবা স্বকর্ম সংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধাদি লাভের সমান সুযোগ পাওয়ার উদ্দশ্যে সাহায্য গ্রুপ ও সমবায় সংগঠিত করা;
চ) সকল সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা;
ছ) কৃষি ঋণ ও অন্যান্য ঋণ, বাজারজাতকরণ সুবিধা ও উপযুক্ত প্রযুক্তি লাভরে সুযোগ পাওয়া এবং ভূমি ও কৃষি সংস্কার ও সেই সাথে ভূমি পুনর্বন্টন স্কীমের ক্ষেত্রে সমান অধিকার লাভ করা;
জ) বিশেষ করে গৃহায়ণ, পয়ঃনিস্কাশন, বিদ্যুত্‍ ও পানি সরবরাহ, পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুবিধা ভোগ করা৷

পরিচ্ছেদ – ৪
অনুচ্ছেদ – ১৫
১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ আইনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষকে সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করবে৷
২. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ বিভিন্ন নাগরিক বিষয়ে নারীকে পুরুষরে বৈধ ক্ষমতার অনুরূপ ক্ষমতা প্রদান করবে এবং সেই ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য একই সুযোগ দেবে ৷ বিশেষ করে রাষ্ট্রসমূহ নারীকে চুক্তি সম্পাদনে ও সম্পত্তি দেখাশোনার সমান অধিকার দেবে এবং আদালত ও ট্রাইবুনালে কার্যক্রমের সকল স্তরে তাদের সঙ্গে সমান আচরণ করবে৷
৩. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর বৈধ ক্ষমতা সংকুচিত করার লক্ষ্যে প্রণীত আইনভিত্তিক সকল চুক্তি ও যে কোন ধরনের ব্যক্তিগত দলিল বাতিল করবে৷
৪. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ সকল নাগরিকের চলাচল এবং আবাসস্থল ও বসত স্থাপন বেছে নেয়ার ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতা সম্পর্কিত আইনের ক্ষেত্রে পুরুষ নারীক সমান অধিকার দেবে৷
অনুচ্ছেদ – ১৬
১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ, বিবাহ ও পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ক সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সকর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে বিশেষ করে যেসব বিষয় নশ্চিতি করবে সেগুলো হচ্ছে-
ক) বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার জন্য একই অধকিার;
খ) স্বাধীনভাবে স্বামী/স্ত্রী হিসেবে সঙ্গী বেছে নেয়ার এবং তাঁদের স্বাধীন ও পূর্ণ সম্মতিতে বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার জন্য একই অধিকার
গ) বিবাহ এবং এর বিচ্ছেদ কালে একই অধিকার ও দায়িত্ব;
ঘ) তাঁদের বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে, তাঁদের সন্তান-সন্তুতির বিষয়ে, পিতা মাতা হিসেবে একই অধিকার ও দায়িত্ব; সকল ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থই হবে সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; ঙ) তাঁদের সন্তান সংখ্যা কত হবে ও সন্তান জণ্মদানে কতটা বিরতি দিয়ে হবে সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে ও দায়িত্বের সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিভিন্ন অধিকার প্রয়োগে সক্ষমতা অর্জনের জন্য তথ্য, শিক্ষা ও উপায় লাভের একই অধিকার;
চ) অভিভাবকত্ব, প্রতিপালকত্ব, ট্রাস্টিশীপ ও পোষ্যসন্তান গ্রহণ অথবা অনুরূপ ক্ষেত্রে, যেখানে জাতীয় আইনে এসব ধারণা বিরাজমান, একই অধিকার ও দায়িত্ব; সকল ক্ষেত্রে শশিুদের স্বার্থই হবে সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ;
ছ) পারিবারিক নাম, পেশা  অথবা বৃত্তি পছন্দের অধিকারসহ স্বামী অথবা স্ত্রী হিসেবে সমান অধিকার;
জ) বিনামূল্যে অথবা মূল্যের বিনিময়ে সম্পত্তির মালিকানা, তা অর্জন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ভোগ ও নিষ্পত্তির ব্যাপারে স্বামী স্ত্রী উভয়ের একই অধিকার৷

২. শিশুদের বাগদান ও শিশু বিবাহের কোন আইনগত কার্যকারিতা থাকবে না এবং বিবাহের একটি সবনম্িন বয়স নির্ধারণ ও সরকারী রেজিষ্ট্রিতে বিবাহ রেজিষ্ট্রিভূক্ত বাধ্যতামুলক করার জন্য আইন প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
পরিচ্ছেদ – ৫
অনুচ্ছেদ – ১৭
১. এই কনভেনশনের বাস্তবায়ন অর্জিত অগ্রগতি বিবেচনার জন্য, কনভনেশন কার্যকার হতে শুরু হওয়ার সময় নৈতিক প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন এবং কনভেনশনে বর্ণিত ক্ষেত্রে দক্ষতাসম্পন্ন ১৮ জন, এবং শরীক পঁয়ত্রিশতম রাষ্ট্রকৃত কনভেনশন অনুমোদিত অথবা সমর্থিত হওয়ার পর ২৩ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সম্পর্কিত একটি কমিটি গঠন করা হবে রাষ্ট্রপক্ষসমূহ তাদের নাগরিকদের মধ্য থেকে বিশেষজ্ঞ নির্বাচন করবে, যারা ব্যক্তি যোগ্যতায় কাজ করবেন এবং তাদের নির্বাচনের সময় ন্যায্য ভৌগলিক এলাকা  ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব ও বিভিন্ন পর্যায়ের সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব এবং সেই সাথে মুল আইনগত পদ্ধতিসমূহ বিবেচনা করা হবে৷
২. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কমিটির সদস্য নির্বাচন করা হবে৷ প্রতিটা রাষ্ট্রপক্ষ তার নাগরিকদের মধ্য থেকে একজনকে মনোনীত করতে পারবে৷
৩. এই কনভনেশন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাস পর প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রতিটি নির্বাচনের তারিখের অন্ততঃ তিন মাস আগে জাতিসংঘ মহাসচিব দুই মাসের মধ্যে মনোনয়ন পেশ করার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কাছে পত্র দেবেন৷ মহাসচিব, মনোনীত ব্যক্তিদের নামের অদ্যাক্ষরের ক্রমানুসারে একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন যাতে এসব প্রার্থীকে মনোনয়ন দানকারী রাষ্ট্রসমূহের নাম উল্লেখ থাকবে এবং এই তালিকা তিনি রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কাছে পাঠাবেন৷
৪. মহাসচিব কর্তৃক জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আহুত রাষ্ট্রপক্ষসমূহের এক বৈঠকে কমিটির সদস্যদের নির্বাচন হবে৷ ঐ বৈঠকে কমিটির জন্য নির্বাচিত সদস্য হবেন তাঁরাই যারা চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের উপস্থিত প্রতিনিধিদের সর্বাধিক সংখ্যক ও নিরন্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন৷ বৈঠকের কোরাম গঠনের  জন্য কনভনেশনে রাষ্ট্রপক্ষসমূহের দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধির উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে৷
৫. কমিটির সদস্যরা চার বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবেন৷ অবশ্য প্রথম নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে নয় জনের মেয়াদ দুই বছর পর শেষ হয়ে যাবে; প্রথম নির্বাচনের পরপরই কমিটির চেয়ারম্যান লটারীর মাধ্যমে এই নয় জন সদস্যের নাম বাছাই করবেন৷
৬. পঁয়ত্রশিতম অনুমোদন অথবা সমর্থনের পর এই ধারার ২, ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে কমিটির অতিরিক্ত পাঁচজন সদস্যের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এভাবে নির্বাচিত অতিরিক্ত সদস্যদের মধ্যে দুই জনের মেয়াদ দুই বছর পর শেষ হবে কমিটির চেয়ারম্যান লটারীর মাধ্যমে এই দুই জন সদস্যের নাম বাছাই করবেন৷
৭. অনিয়মিত শূন্যতা পুরণের জন্য যে রাষ্ট্রের বিশষেজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করা থেকে বিরত রয়েছেন, সেই রাষ্ট্র, কমিটির অনুমোদন সাপক্ষে, তার নাগরিকদের মধ্য থেকে অপর একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করবে৷
৮. কমিটির দায়িত্বের গুরুত্ব বিবেচনা করে সাধারণ পরিষদের আরোপ করা শর্তে কমিটির সদস্যগণ, সাধারণ পরিষদের অনুমোদন নিয়ে জাতিসংঘের তহবিল থেকে বেতন বা ভাতা গ্রহণ করবেন৷
৯. জাতিসংঘ মহাসচিব এই সনদের অধীনে কমিটির কার্যক্রম কার্যকর ভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী ও সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করবেন৷
অনুচ্ছেদ – ১৮
১. রাষ্ট্রপক্ষসমূহ, এই কনভেনশনের বিধানসমূহ কার্যকর করতে আইনগত, বিচার বিভাগীয়, প্রশাসনিক ও অন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে সম্পর্কে এবং এ ব্যাপারে অর্জিত অগ্রগতির বিষয়ে একটা রিপোর্ট কমিটির বিবেচনার জন্য মহাসচিবের কাছে পেশ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এবং তা পেশ করা হবে;
ক) কনভেনশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে এবং
খ) তারপর প্রতি চার বছর অন্তর এবং কমিটি যখনই অনুরোধ করবে, সেই সময়৷
২. রিপোর্টে এই কনভেনশনের অধীন প্রত্যাশিত মাত্রায় দায়িত্ব পূরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয়াদি ও অসুবধিাসমূহের উল্লখে থাকতে পারে৷
অনুচ্ছেদ – ১৯
১. কমিটি নিজেই তার কার্যপ্রণালী বিধি প্রণয়ন করবে৷
২. কমিটি দুই বছর মেয়াদের জন্য তার কর্মকর্তা নির্বাচন করবে৷
অনুচ্ছেদ – ২০
১. কমিটি, এই কনভেনশনের ১৮ ধারা অনুসারে পেশকৃত রিপোর্টসমূহ বিবেচনার জন্য সাধারণতঃ বছরে একবার অনধিক দুই সপ্তাহের জন্য বৈঠকে মিলিত হবে৷
২. কমিটির বৈঠকসমূহ সাধারণতঃ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অথবা কমিটি নির্ধারিত অন্য যে কোন সুবিধাজনক স্থানে অনুষ্ঠিত হবে৷
অনুচ্ছেদ – ২১
১. কমিটি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের মাধ্যমে প্রতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কাছে তার কার্যক্রম সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করবে এবং রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট ও তথ্য পরীক্ষার ভিত্তিতে পরামর্শ ও সাধারণ সুপারিশ এবং সেই সাথে রাষ্ট্রপক্ষসমূহের কোন মন্তব্য থাকলে, তা কমিটির রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷
২. মহাসচিব নারীর অবস্থান সম্পর্কিত কমশিনের অবগতির জন্য কমিটির রিপোর্ট তার কাছে পাঠাবেন৷
অনুচ্ছেদ – ২২
এই কনভেনশনের যেসব বিধান বিশেষজ্ঞ সংস্থাসমূহের কর্মপরিধির আওতায় পরে, সেগুলোর বাস্তবায়ন বিবেচনার ক্ষেত্রে তার প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে৷ যেসব ক্ষেত্রে কনভেনশনের বাস্তবায়ন বিশেষজ্ঞ সংস্থাসমূহের কর্মপরিধির আওতায় পড়ে, সেগুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ সংস্থাসমূহকে রিপোর্ট করার জন্য কমিটি আহবান জানাতে পারবে৷
পরিচ্ছেদ – ৬
অনুচ্ছেদ – ২৩
এই কনভেনশনের কোন কিছুই পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা অর্জনের লক্ষ্যে অধিক উপযোগ্য এমন কোন বিধানের জন্য অন্তরায় সৃষ্টি করবে না, যে বিধান অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারে :
ক) শরীক একটি দেশের আইনে; অথবা
খ) ঐ দেশের জন্য কার্যকর অন্য যে কোন আন্তর্জাতিক সনদ, চুক্তি অথবা সমঝোতায়৷
অনুচ্ছেদ – ২৪
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ, এই কনভেনশনে স্বীকৃত অধিকারসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন অর্জনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায় প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে৷
অনুচ্ছেদ – ২৫
১. এই কনভেনশন সকল রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাক্ষরের জন্য খোলা থাকবে৷
২. জাতিসংঘ মহাসচিব এই কনভেনশনের রক্ষকের দায়িত্ব পালন করবে৷
৩. এই কনভেনশন অনুমোদন সাপেক্ষে অনুমোদনের দলিলপত্রাদি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা রাখা হবে৷
৪. এই চুক্তি সকল রাষ্ট্র কর্তৃক সমর্থনের জন্য খোলা থাকবে৷ জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে সমর্থনের একটি দলিল জমা দেয়ার মাধ্যমে সমর্থন কার্যকর হবে৷
অনুচ্ছেদ – ২৬
১. যে কোন রাষ্ট্রপক্ষ যে কোন সময় জাতিসংঘ মহাসচিবকে সম্বোধন করে লিখিত নোটশিটের মাধ্যমে বর্তমান কনভেনশন সংশোধনের অনুরোধ জানাতে পারবে৷
২. এ ধরনের অনুরোধের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হবে কি না জাতিসংঘের সাধারণ পরষিদ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ – ২৭
১. অনুমোদন অথবা সমর্থনের ২০তম দলিল জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা দেয়ার তারিখের পর ত্রিশতম দিন থেকে এই কনভেনশন কার্যকর হওয়া শুরু হবে৷
২. অনুমোদন অথবা সমর্থনের ২০তম দলিল জমা দেয়ার পর এই কনভেনশন অনুমোদন অথবা সমর্থনকারী প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে, স্বঅনুমোদন অথবা সমর্থনের নিজস্ব দলিল জমা দেয়ার তারিখের পর ত্রিশতম দিন থেকে কনভেনশনটি সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য কার্যকর হবে৷

অনুচ্ছদে – ২৮
১. জাতিসংঘ মহাসচিব অনুমোদন অথবা সমর্থনের সময় রাষ্ট্রসমূহ যেসব মতামত প্রদান করবে তা গ্রহণ করবেন এবং সকল রাষ্ট্ররে মধ্যে তা বিতরণ করবেন৷
২. বর্তমান কনভেনশনের লক্ষ্য ও উদ্দশ্যেবিরোধী বক্তব্য দানের অনুমতি দেয়া হবে না৷
৩. প্রদত্ত মতামত জাতিসংঘ মহাসচিবকে সম্বোধন করে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে যে কোন সময় প্রত্যাহার করা যেতে পারে এবং মহাসচিব তখন সকল রাষ্ট্রকে এ বষিয়ে অবহতি করবেন৷ এ ধরনের নোটিশ যেদিন গ্রহণ করা হবে,সেদিন থেকে তা গণ্য হবে৷
অনুচ্ছেদ – ২৯
১. এই কনভেনশনের ব্যাখ্যা অথবা প্রয়োগের ব্যাপারে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রপক্ষের মধ্যে কোন মত বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা না গেলে তাদের একজনের অনুরোধে বিষয়টি সালিশের জন্য পেশ করা হবে৷ সালিশের জন্য অনুরোধ জানানোর তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের যে কোন একটি রাষ্ট্র আদালতের বিধি অনুসারে অনুরোধের মাধ্যমে মত বিরোধের বষিয়টি ন্যায়বিচার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতে পেশ করতে পারবে৷
২. প্রতিটি রাষ্ট্রপক্ষ এই কনভনেশন স্বাক্ষর, অনুমোদন অথবা সমর্থন করার সময় ঘোষণা করতে পারবে যে এই ধারার ১ অনুচ্ছেদ দ্বারা আবদ্ধ বলে বিবেচনা করেনা৷ এই মর্মে মত প্রদানকারী কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে কনভনেশনে শরীক অপর রাষ্ট্রসমূহ ঐ অনুচ্ছদে দ্বারা হবেনা৷
৩. কোন রাষ্ট্রপক্ষ এই ধারার ২ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন মতামত প্রদান করলে যে কোন সময় সেই মতামত জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে নোটিশ দানের মাধ্যমে প্রত্যাহার করতে পারবে৷
অনুচ্ছেদ – ৩০
এই কনভেনশন, যার আরবী, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ ও স্পেনীয় সংস্করণ সমান গ্রহণযোগ্য, জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা রাখা হবে৷
এই দলিলে যা কিছু লেখা আছে, তা প্রত্যয়নপূর্বক যথাযথভাবে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত হয়ে নিম্নস্বাক্ষরকারী এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.