জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি- ২০১১

ভূমিকা
বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। নারী উন্নয়ন তাই জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে প্রথমবারের মত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ১৯৯৭ প্রণয়ন করে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত ও অবহেলিত এদেশের বৃহত্তর নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়ন করা। ১৯৯৭ সালে নারী সমাজের নেত্রীবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে ব্যাপক মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতিতে এদেশের নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলনের প্রতিফলন ঘটে।
পরবর্তীতে ২০০৪ সালে তৎকালীন চার দলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার উক্ত নীতিতে পরিবর্তন ঘটায় ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৪ প্রণয়ন করে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংশোধিত আকারে প্রণীত হয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৮, কিন্তু তার কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮-এ নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতি পূনর্বহাল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এবং নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার নিমিত্তে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করছে।
পটভূমি
নারী যুগ যুগ ধরে শোষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় গোঁড়ামী, সামাজিক কুসংস্কার, কুপমন্ডুকতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে তাকে সর্বদা রাখা হয়েছে অবদমিত। গৃহস্থালী কাজে ব্যয়িত নারীর মেধা ও শ্রমকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের আহবান জানিয়ে বলেছিলেন “তোমাদের কন্যাগুলিকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িয়া দাও, নিজেরাই নিজেদের অন্নের সংস্থান করুক”। তার এ আহবানে নারীর অধিকার অর্জনের পন্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এ দেশের নারী জাগরণে সাড়া পড়েছিল সাধারণত: শিক্ষা গ্রহণকে কেন্দ্র করে। এছাড়া ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নারী তার অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে ওঠে। বায়ান্ন-এর ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অসামান্য অবদান রাখে। যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন ছাড়াও বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান এবং স্বামী ও সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়ে আমাদের মায়েরা এক বিশাল দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের নিদর্শন রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে আমাদের লক্ষাধিক মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। মানবাধিকার লংঘনের এই জঘন্য অপরাধ কখনই ভুলবার নয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে নারী আত্ননির্ভরশীল হয়ে ওঠে। শিক্ষা গ্রহণ ও কর্মসংস্থানের প্রত্যাশায় নারী সমাজের মাঝে বিপুল সাড়া জাগে। গ্রামে নিরক্ষর নারী সমাজের মাঝেও কাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবার আগ্রহ জাগে। জাতীয় উৎপাদনে নারীর অংশগ্রহণ আবশ্যক হয়ে ওঠে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয় উন্নয়ন পরিকল্পনা। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসন জেঁকে বসে ও দীর্ঘ সময় সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত হয়। অবশ্য এ সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী সংগঠনগুলির আন্দোলনের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলিও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি নারী সংগঠনগুলিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা সচেতন হয়ে ওঠে। এতে করে দেশে নারী উন্নয়নে এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নারী
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮) স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ, ছিন্নমূল নারীর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কর্মসূচি গৃহীত হয়। নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের জন্য প্রথমবারের মত নারী উন্নয়ন বিষয়টি গুরুত্ব পায় ও নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদেশী সাহায্যের মাধ্যমে কর্মসূচি গ্রহণ ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়। ১৯৭২ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক-বাহিনীর হাতে সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। যে সব মায়েদের পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর অত্যাচারের কবল থেকে মুক্ত করা গিয়েছিল তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষতঃ শহীদের স্ত্রী ও কন্যাদের জন্য চাকুরি ও ভাতার ব্যবস্থা করেছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সনে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে। এই বোর্ডের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ছিল: (ক) স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত নারী ও শিশুর সঠিক তথ্য আহরণের জন্য জরিপ কাজ পরিচালনা করা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; (খ) যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা; এছাড়াও, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রচেষ্টায় দশজন বীরাঙ্গনা নারীর বিয়ের ব্যবস্থা করা। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অধিকাংশ মেয়ের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নারী পুনর্বাসন বোর্ডের দায়িত্ব ও কার্যপরিধি ক্রমশ: বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৭৪ সনে এই বোর্ডকে বৃহত্তর কলেবরে পুনর্গঠিত করে নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করা হয়। ফাউন্ডেশনের বহুবিধ কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম ছিল: (১) দেশের সকল জেলা ও মহকুমায় নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলা; (২) নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা; (৩) নারীকে উৎপাদনমূখী কর্মকান্ডে নিয়োজিত করে প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা; (৪) উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত নারীর জন্যে দিবাযত্ন সুবিধা প্রদান করা; (৫) যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের চিকিৎসা প্রদান করা; এবং (৬) মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীর ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্যে বৃত্তিপ্রথা চালু করা যা বর্তমানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় “দুস্থ’ মহিলা ও শিশু কল্যাণ তহবিল” নামে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারীদের অর্থকরী কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম আন্ত:খাত উদ্যোগ গৃহীত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নারীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি (গ্রামীণ মহিলা ক্লাব) চালু করে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। পরবর্তীতে এই কর্মসূচি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নারী সমবায় কর্মসূচীতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৩ সনে সাভারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ৩৩ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত “গ্রামীণ মহিলাদের জন্য কৃষিভিত্তিক কর্মসূচীর” কাজও শুরু হয়।
দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৮-১৯৮০) নারী কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮৫-৯০) একই কর্মসূচি গৃহীত হয়।
চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) নারী উন্নয়নকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে আন্ত:খাত উদ্যোগ গৃহীত হয়। এ পরিকল্পনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য, সেবা ও অন্যান্য খাতে নারীর বর্দ্ধিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য দূর করা, দক্ষতা বৃদ্ধি করা, স্ব-কর্মসংস্থান ও ঋণ সুবিধা সম্প্রসারণ করা, জেন্ডার সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নারীর জন্য সহায়ক সুবিধা সম্প্রসারণ যথা, হোষ্টেল, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, আইন সহায়তা প্রদান উল্লেখযোগ্য।
ত্রিবার্ষিক আবর্তক পরিকল্পনা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে স্ব-কর্মসংস্থান, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, অনানুষ্ঠানিক ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন, নারী সহায়তা কর্মসূচী, কর্মজীবী মহিলা হোষ্টেল স্থাপন, দু:স্থ নারীর জন্য খাদ্য-সহায়তা কর্মসূচী, খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচী, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, পল্লী অঞ্চলে মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং টিকাদান কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।
পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারীকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণের প্রচেষ্টাকেই আরো জোরদার করা হয় এবং নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সনদ, বেইজিং প্লাটফরম  ফর এ্যাকশন, নারী উন্নয়নে জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। কৃষি এবং পল্লী উন্নয়ন, শিল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, খনিজ, পরিবহন ও যোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মাইক্রো অধ্যায়গুলোতে জেন্ডার প্রেক্ষিত সম্পৃক্ত করা হয়।
৪. বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশ
আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে সত্তর দশকের প্রথম ভাগ থেকেই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার নারী উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ১৯৭৫ সনে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলনে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে দেশের বাইরে নারী উন্নয়নের যে আন্দোলন চলছিল তার মূলধারায় বাংলাদেশ যুক্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে নারী সমাজ উন্নয়নের যে অবস্থানে রয়েছে তার ভিত্তি এই উদ্যোগের ফলে রচিত হয়। জাতিসংঘ নারীর রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালকে ‘নারী বর্ষ’ হিসাবে ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলনে ১৯৭৬-১৯৮৫ সালকে নারী দশক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নারী দশকের লক্ষ্য ছিল সমতা, উন্নয়ন ও শান্তি-। ১৯৮০ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় নারী সম্মেলন। এতে ১৯৭৬-৮৫ পর্বের নারী দশকের প্রথম পাঁচ বছরের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং নারী দশকের লক্ষ্যের আওতায় আরও তিনটি লক্ষ্য- শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান চিহ্নিত হয়। ১৯৮৫ সালে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবীতে তৃতীয় বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং নারী উন্নয়নের জন্য সমতা, উন্নয়ন ও শান্তির ভিত্তিতে অগ্রমুখী কৌশল গৃহীত হয়। চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের প্রস্ততি পর্বে ১৯৯৪ সালে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নারী উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে জাকার্তা ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়। এ ঘোষণায় বলা হয় ক্ষমতা বন্টন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মাঝে তীব্র অসমতা বিদ্যমান। এই অসমতা ও সীমাবদ্ধতা নিরসনের উদ্দেশ্যে সরকারসমূহকে উদ্যোগ নিতে তাগিদ দেয়া হয়। কমনওয়েলথ ১৯৯৫ সালে জেন্ডার ও উন্নয়ন কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। সার্ক দেশসমূহও নারী উন্নয়নের জন্যে কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ১৯৯৫ সালের ৪-১৫ সেপ্টেম্বর বেইজিং-এর চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়। বেইজিং কর্মপরিকল্পনায় নারী উন্নয়নে ১২টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে। ক্ষেত্রগুলো হলো- নারীর ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য; শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অসম সুযোগ; স্বাস্থ্যসেবার অসম সুযোগ; নারী নির্যাতন; সশস্ত্র সংঘর্ষের শিকার নারী; অর্থনৈতিক সম্পদে নারীর সীমিত অধিকার ; সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ক্ষমতায় অংশগ্রহণে অসমতা; নারী উন্নয়নে অপর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো; নারীর মানবাধিকার লংঘন; গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক প্রতিফলন এবং অপ্রতুল অংশগ্রহণ; পরিবেশ সংরক্ষণে ও প্রাকৃতিক সম্পদে নারীর সীমিত অধিকার এবং কণ্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য। সকল আন্তর্জাতিক ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ।
১৯৯২ সালে রিও-ডি-জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনে গৃহীত পরিবেশ ও উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা, ১৯৯৩ সালে ভিয়েতনাম মানবাধিকার ঘোষণা, ১৯৯৪ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত জনসংখ্যা ও উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা এবং ১৯৯৫ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত কর্মপরিকল্পনায় নারী ও শিশু উন্নয়ন ও তাদের অধিকারের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ সকল সনদ ও কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর এবং এগুলোর বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে গৃহীত শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকৃত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
.১ নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ
রাষ্ট্র, অর্থনীতি, পরিবার ও সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ডিসেম্বর, ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) গৃহীত হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ সালে কার্যকর হয়। নারীর জন্য আন্তর্জাতিক বিল অব রাইটস বলে চিহ্নিত এ দলিল নারী অধিকার সংরক্ষণের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মানদণ্ড বলে বিবেচিত। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চারটি ধারায় [২, ১৩(ক), ১৬(ক) ও (চ)] সংরক্ষণসহ এ সনদ অনুসমর্থন করে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ধারা ১৩(ক) এবং ১৬.১(চ) থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হয়। এই সনদে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশ প্রতি চার বছর অন্তর জাতিসংঘে রিপোর্ট পেশ করে। সর্বশেষ ষষ্ঠ ও সপ্তম পিরিয়ডিক রিপোর্ট ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে জাতিসংঘে প্রেরণ করা হয় ও ২৫ জানুয়ারি ২০১১ তে সিডও কমিটিতে বাংলাদেশ সরকার রিপোর্টটি উপস্থাপন করে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রায় সকল ফোরামে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ও আনতর্জাতিক সনদ ও দলিলসমূহে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নারী উন্নয়নে বিশ্ব ভাবধারার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত মিলেনিয়াম সামিটের অধিবেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। একই সময় ঙঢ়ঃরড়হধষ চৎড়ঃড়পড়ষ ড়হ ঈঊউঅড-তে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। গুরুত্বপূর্ণ এই সনদে স্বাক্ষরকারী প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়াও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী ও অনুসমর্থনকারী রাষ্ট্র হিসেবে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বহুমুখী ব্যবস’া গ্রহণে নিজ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
৫. নারীর মানবাধিকার ও সংবিধান
১৯৭২ সনে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় রচিত এ সংবিধানে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে ২৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী”। ২৮(১) অনুচ্ছেদে রয়েছে, “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না”। ২৮(২) অনুচ্ছেদ আছে, “রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্ত

রে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন”। ২৮(৩)-এ আছে, “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না”। ২৮(৪)-এ উল্লেখ আছে যে, “নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না”। ২৯(১) এ রয়েছে “প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে”। ২৯(২) এ আছে, “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারীপুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না”। ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য জাতীয় সংসদে ৪৫টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে এবং ৯ অনুচ্ছেদের অধীনে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের উন্নয়নে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
৬. বর্তমান প্রেক্ষাপট
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন এবং সার্বিক উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারী দারিদ্র বিমোচন, নারী নির্যাতন বন্ধ, নারী পাচার রোধ, কর্মক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা বিধান এবং আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে নারীর পূর্ণ ও সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। হতদরিদ্র নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাদের ভাতা প্রদান কর্মসূচী, শহরাঞ্চলে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিত্তহীন মহিলাদের খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ভিজিডি কর্মসূচী, দারিদ্র বিমোচন ঋণ প্রদান কর্মসূচী। নারীদের কৃষি, সেলাই, ব্লক-বাটিক, হস্তশিল্প, বিউটিফিকেশন, কম্পিউটার ও বিভিন্ন আয়বর্ধক বিষয়ে ব্যাপক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থন সৃষ্টি, শ্রমবাজারে ব্যাপক অংশগ্রহণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ও বিনা জামানতে ঋণ সহায়তা প্রদান ও পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্বায়নের এই যুগে নারীকে সামষ্টিক অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র ঘধঃরড়হধষ ঝঃৎধঃবমু ঋড়ৎ অপপবষবৎধঃবফ চড়াবৎঃু জবফঁপঃরড়হ (ঘঝঅচজ ওও) তে বিভিন্ন কার্যক্রম সন্নিবেশিত হয়েছে। এই কৌশলপত্রে দারিদ্র নির্মূলের লক্ষ্যে পাঁচটি কৌশল ব্লক চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে দারিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন অন্যতম। যে পাঁচটি সহায়ক কৌশল গৃহীত হয়েছে তন্মধ্যে উন্নয়ন কর্মকান্ডের সকল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণমূলক ক্ষমতায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নারী দারিদ্র্য দূরীকরণে গৃহীত বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে এই কৌশলপত্রে রয়েছে সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বলয়ের প্রসারের মধ্য দিয়ে হতদরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। ১৯৯৮ সালে শুরু হয় বিধবা ও দু:স্থ্ নারীদের ভাতা প্রদান কার্যক্রম। বর্তমানে দেশে ৯,২০,০০০ নারী এই কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত। প্রতি মাসে একজন বিধবা নারী ৩০০ টাকা হারে ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই সাথে রয়েছে মাতৃত্বকালীন ভাতা। মোট ৮৮,০০০ দারিদ্র মা এই কর্মসূচীর আওতায় প্রতি মাসে ৩৫০ টাকা ভাতা প্রাপ্ত হন। এছাড়াও বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম চলমান যা থেকে নারীরা উপকৃত হন। বিত্তহীন নারীর দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি (ভিজিডি) এর আওতায় খাদ্য নিরাপত্তারূপে ৭,৫০,০০০ দরিদ্র নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল বা ২৫ কেজি পুষ্টি আটা বিতরণ করা হয়। কৌশলপত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন প্রদান বিশেষত আয় বর্ধক প্রশিক্ষন, কৃষি, কম্পিউটার ইত্যাদি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে নারীকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সহজ শর্তে স্বল্প হারে ঋণ প্রদান, বাজারজাতকরনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, আর্থিক সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষত টেক্সটাইল, হস্তশিল্প, বয়নশিল্পের বিকাশে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ঐড়সব ইধংবফ গরপৎড় ঊহঃবৎঢ়ৎরংব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শ্রম বাজারে নারীর প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জঁৎধষ ঘড়হ ঋধৎস অপঃরারঃরবং এর উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করার মধ্য দিয়ে নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদরূপে গড়ে তোলার বিষয় কৌশলপত্রে অনত্মর্ভূক্ত করা হয়েছে।
এই কৌশলপত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ করে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১০-২০১৫) প্রণয়ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
৭. নারী ও আইন
বাংলাদেশে নারী ও কণ্যা শিশুর প্রতি নির্যাতন রোধকল্পে কতিপয় প্রচলিত আইনের সংশোধন ও নতুন আইন প্রণীত হয়েছে। এসব আইনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যৌতুক নিরোধ আইন, বাল্যবিবাহ রোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ প্রভৃতি। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইনগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, নির্যাতিত নারীদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া, আইনজীবীর ফি ও অন্যান্য খরচ বহনে সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে জেলা ও সেশন জজ এর অধীনে নির্যাতিত নারীদের জন্য একটি তহবিল রয়েছে।
৭.১ পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০
জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসাবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা হইতে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত হয় পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০।
৭.২ নাগরিকত্ব আইন (সংশোধিত), ২০০৯
২০০৯ সালে মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে মা কর্তৃক সন্তানকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিধান সন্নিবেশিত করা হয়।
৭.৩ ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯
মেয়েদের উত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানী প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলে দণ্ডবিধি আইনের ৫০৯ ধারা সংযুক্ত করার মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা অর্পন করা হয়।
৮. নারী নির্যাতন প্রতিরোধ
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন রয়েছে। এখনও নারী নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নারী হত্যা, নারী ও কণ্যা শিশু অপহরণ ও পাচার, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, পারিবারিক নির্যাতন, যৌন হয়রানী ও অন্যান্য নারী নির্যাতনমূলক
অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। গ্রাম্য সালিশির মাধ্যমে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও ফতোয়ার নামে বিচার বহির্ভূত শাস্তি প্রদানের ঘটনা ঘটছে। নারী নির্যাতনের মামলাগুলো তদন্তের জন্য যথেষ্ট ফরেনসিক সুবিধা এখনও গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী এবং পাঁচটি বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরীতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অপরাধীকে সনাক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা। অনেক ক্ষেত্রে মামলা দায়ের হয়না এবং বিভিন্ন কারণে বিচার বিলম্বিত হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্যাতনের শিকার নারী ও কণ্যা শিশুর সহায়তার জন্য বিভাগীয় শহরে মহিলা সহায়তা কেন্দ্র চালু রয়েছে। এ কেন্দ্রে নির্যাতনের শিকার নারীদের আশ্রয়, বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও মামলা পরিচালনার জন্য সহায়তা দেয়া হয়। ছয়টি বিভাগীয় শহরে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে ও এর মাধ্যমে একই জায়গা থেকে সমন্বিতভাবে চিকিৎসা সেবা, আইনগত সেবা, পুলিশী সহায়তা, আশ্রয় ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারীকে মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়। সেই সাথে বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দান করে আত্মনির্ভর হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও জাতীয় মহিলা সংস্থায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল ও হেল্প লাইনের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যথাক্রমে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে এবং ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিসমূহে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। নারী ও কণ্যা শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারা দেশে ৪৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত হয়েছে।
৯. নারী মানবসম্পদ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করাসহ টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য দক্ষ মানব সম্পদের কোন বিকল্প নেই। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীর পূর্বশর্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ, মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ। সরকার নারীকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরের প্রচেষ্টায় শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নারী শিক্ষা বিষয়টিকে বিশেষ প্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। এই কর্মসূচী ছাত্রী ভর্তির হার বৃদ্ধি ও ঝরে পড়া রোধে অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে। স্নাতক পর্যন্ত নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীকে স্বাবলম্বী করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। নারী শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি ক্ষেত্রে সমসুযোগ প্রদানে সরকার সচেষ্ট। নারী শিক্ষার সমপ্রসারণে সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের কারণে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে নারীর অবস্থানে ইতিবাচক প্রভাব ঘটেছে। নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, ভাউচার স্কিমের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার সচেষ্ট। নারীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার দশটি নারী বান্ধব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে।
১০. রাজনীতি ও প্রশাসন
নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নারীর অন্তর্ভুক্তি তথা উন্নয়নের মূলধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করার প্রথম উদ্যোগ ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধু সরকার গ্রহণ করে। সরকারি চাকুরিতে মেয়েদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়ে সকল ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ অবারিত করে দশভাগ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। ১৯৭৩ সনে
দু’জন নারীকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ১৯৭৪ সনে একজন নারীকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়।
সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রেই নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়টিতেও সরকার গুরুত্ব আরোপ করেছে। সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ ইতিবাচক। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, সংসদের উপনেতা নারী। মন্ত্রিসভায় ৬ জন এবং জাতীয় সংসদে ৩৪৫ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৯ জন সরাসরি নির্বাচিত ও ৪৫ জন সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত নারী রয়েছেন। জাতীয় সংসদ ও তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়টি আজ দৃশ্যমান। ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকারে ইউনিয়ন পরিষদে ৩ জন নির্বাচিত নারী সদস্য হওয়ার বিধান প্রণয়ন করেন। শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক প্রশাসনে সচিব ও জেলা প্রশাসক পদে, পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে ১ জন নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়।
বর্তমানে প্রশাসনে সচিব পর্যায়ে তিন জন এবং অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে চার জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রদূত পদে তিন জন নারী বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে সর্বপ্রথম নারী বিচারপতি নিয়োগ প্রদান নারী ক্ষমতায়নের নতুন মাইলফলক যুক্ত করেছে। এছাড়াও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি পদে পাঁচ জন নারী, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, তথ্য অধিকার কমিশনে নারী সদস্য রয়েছেন। ক্ষমতায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য গেজেটেড বা তদসমপদে প্রবেশ পর্যায়ে শতকরা ১০ ভাগ এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণী পদে প্রবেশ পর্যায়ে শতকরা ১৫ ভাগ কোটা নির্দিষ্ট রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শতকরা ৬০ ভাগ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নারী সংগঠিত পুলিশ ইউনিট (ফিমেল ফর্মড পুলিশ ইউনিট, এফপিইউ) প্রথমবারের মত হাইতিতে দায়িত্ব পালন করছে।
১১. দারিদ্র্য
দেশের শতকরা ৪০ ভাগ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী এবং এর মাঝে নারী প্রধান পরিবারের সংখ্যা অধিক। এখনও নারীর অনেক কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন হয় নাই। গৃহস্থালী কর্মে নারীর শ্রম ও কৃষি অর্থনীতিতে নারীর অবদানের মূল্যায়ন দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে নারীর সঠিক মূল্যায়ণ নিরূপিত হয়নি। হতদরিদ্র নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
১২. নারী উন্নয়নে সাংগঠনিক ও প্রতিষ্ঠানিক উত্তরণ
নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৭২ সালে নারী পুনর্বাসন বোর্ড, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন কল্যাণ ফাউন্ডেশন, ১৯৭৬ সালে জাতীয় মহিলা সংস্থা ও ১৯৭৮ সালে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করে। ১৯৮৪ সালে মহিলা বিষয়ক পরিদপ্তর গঠিত হয়। ১৯৯০ সালে পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৪ সালে শিশু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নামকরণ “মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়” করা হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে, জাতীয় মহিলা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমী, কর্মজীবী মহিলা হোষ্টেল, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, নারীদের কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বেগম রোকেয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সকল জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান ও ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় মহিলা সংস্থা ৬৪টি জেলা ও ৫০টি উপজেলায় নারী উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। শিশুদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় নারী উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বিত করার লক্ষ্যে ৪৪ টি নারী উন্নয়ন ফোকাল পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়া, জাতীয় পর্যায়ে নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ৫০ সদস্য বিশিষ্ট “জাতীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন পরিষদ (ঘঈডঈউ)” গঠন করা হয়েছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে আন্ত:মন্ত্রণালয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছে। নারী ও কণ্যা শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও জাতীয় মহিলা সংস্থায় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল এবং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী উভয় পর্যায়ে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে সরকার সক্রিয় সহযোগিতা প্রদান করছে।
১৩. সরকারী ও বেসরকারী কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা
সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নারী সংগঠনগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
১৪. সম্পদ ও অর্থায়ন
নারী উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচী হতে সহায়তার সম্ভাবনা রয়েছে। চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সরকারসমূহ ও আন-র্জাতিক অর্থায়ন সংস্থাসমূহকে দেশে দেশে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমানহারে অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক সারা বিশ্বে নারী ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষ্যে ইউএন উইমেন (টঘ ডড়সবহ) নামক একটি পৃথক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে অবহিত এবং আন্তর্জাতিক পরিসর ও ইউএন উইমেন (টঘ ডড়সবহ) থেকে নারী উন্নয়নে সহযোগিতা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
১৫. মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব
সরকারের রুলস অব বিজনেস অনুসারে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্যতম দায়িত্ব নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন করা। এ দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংবিধানে স্বীকৃত নারীর মৌলিক অধিকার, আন্তর্জাতিক সনদসমূহ যথা, সিডও, সিআরসি এবং বেইজিং ঘোষণা ও কর্ম-পরিকল্পনার আলোকে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেছে। মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী ও শিশু বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন, নারী ও শিশুদের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ, নারী ও শিশুদের আইনগত ও সামাজিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়, কাজের সুযোগ সৃষ্টিসহ নারীর ক্ষমতায়ন, জাতীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক পরিষদের কার্যক্রম, উইড ফোকাল পয়েন্ট কার্যক্রম সমন্বয়, নারী সংগঠন ও সুশীল সমাজের কাজের সমন্বয়, স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠনের নিবন্ধিকরণ ও নিয়ন্ত্রণ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম বার্ষিকী পালন, বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন, রোকেয়া পদক প্রদান, শিশুর উন্নয়ন বিষয়ে ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক সংস্তাসমূহের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা।
দ্বিতীয় ভাগ
১৬. জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির লক্ষ্য
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১-এর লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ:
১৬.১ বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রীয় ও গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৬.২ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১৬.৩ নারীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
১৬.৪ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৬.৫ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূল ধারায় নারীর পূর্ণ ও সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৬.৬ নারীকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ রূপে গড়ে তোলা।
১৬.৭ নারী সমাজকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা।
১৬.৮ নারী পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা।
১৬.৯ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে নারীর অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা।
১৬.১০ নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন দূর করা।
১৬.১১ নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য দূর করা।
১৬.১২ রাজনীতি, প্রশাসন ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে, আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং পারিবারিক জীবনের সর্বত্র নারী পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৬.১৩ নারীর স্বার্থের অনুকূল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও আমদানী করা এবং নারীর স্বার্থ বিরোধী প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
১৬.১৪ নারীর সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৬.১৫ নারীর জন্য উপযুক্ত আশ্রয় এবং গৃহায়ন ব্যবস্থায় নারীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা।
১৬.১৬ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সশস্ত্র সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্থ নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
১৬.১৭ প্রতিবন্ধী নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি নারীর অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা।
১৬.১৮ বিধবা, বয়স্ক, অভিভাবকহীন, স্বামী পরিত্যাক্তা, অবিবাহিত ও সন্তানহীন নারীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
১৬.১৯ গণ মাধ্যমে নারী ও কন্যা শিশুর ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা সহ জেন্ডার প্রেক্ষিত প্রতিফলিত করা।
১৬.২০ মেধাবী ও প্রতিভাময়ী নারীর সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করা।
১৬.২১ নারী উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়ক সেবা প্রদান করা।
১৬.২২ নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা।

১৭. নারীর মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ
১৭.১ মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার সকল ক্ষেত্রে, যেমন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ যে সমঅধিকারী, তার স্বীকৃতি স্বরূপ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ করা।

১৭.২ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (ঈঊউঅড) এর প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৭.৩ নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন ও প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা।
১৭.৪ বিদ্যমান সকল বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ করা এবং আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন বা কমিটিতে নারী আইনজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৭.৫ স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ধর্মের, কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারী স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোন বক্তব্য প্রদান বা অনুরূপ কাজ বা কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করা।
১৭.৬ বৈষম্যমূলক কোন আইন প্রণয়ন না করা বা বৈষম্যমূলক কোন সামাজিক প্রথার উন্মেষ ঘটতে না দেয়া।
১৭.৭ গুণগত শিক্ষার সকল পর্যায়ে, চাকুরিতে, কারিগরি প্রশিক্ষণে,সমপারিতোষিকের ক্ষেত্রে, কর্মরত অবস্থায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যায় নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
১৭.৮ মানবাধিকার ও নারী বিষয়ক আইন সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করা।
১৭.৯ পিতা ও মাতা উভয়ের পরিচয়ে সন্তানের পরিচিতির ব্যবস্থা করা, যেমন জন্মনিবন্ধীকরণ, সকল সনদপত্র, ভোটার তালিকা, ফরম, চাকরির আবেদনপত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে ব্যক্তির নাম প্রদানের সময় পিতা ও মাতার নাম উল্লেখ করা।

১৮. কন্যা শিশুর উন্নয়ন
১৮.১ বাল্য বিবাহ, কন্যা শিশু ধর্ষণ, নিপীড়ন, পাচারের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা।
১৮.২ কন্যা শিশুর চাহিদা যেমন, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন আচরণ করা ও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা।
১৮.৩ কন্যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা।
১৮.৪ কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ দূরীকরণ এবং পরিবারসহ সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা।
১৮.৫ কন্যা শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
১৮.৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন রাসত্মাঘাটে কন্যা শিশুরা যেন কোনরূপ যৌন হয়রানি, পর্নোগ্রাফী, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
১৮.৭ কন্যা শিশুর জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন বিনোদন, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুবিধা নিশ্চিত করা।
১৮.৮ প্রতিবন্ধী কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরন দূরীকরণ এবং সকল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১৯. নারীর প্রতি সকল নির্যাতন দূরীকরণ
১৯.১ পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়ন, নারী ধর্ষণ, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা দূর করা,
১৯.২ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সম্পর্কিত প্রচলিত আইন যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশোধন এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা।
১৯.৩ নির্যাতনের শিকার নারীকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা।
১৯.৪ নারী পাচার বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন করা।
১৯.৫ নারীর প্রতি নির্যাতন দূরীকরণ এবং এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য বিচার ব্যবস্থায় পুলিশ বাহিনীর সর্বস্তরে বর্ধিতহারে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৯.৬ বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগকে নারীর অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া ও জেন্ডার সংবেদনশীল করা।
১৯.৭ নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতন ও পাচার সম্পর্কীয় অপরাধের বিচার ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পন্ন করার লক্ষ্যে বিচার পদ্ধতি সহজতর করা।
১৯.৮ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভাগীয় শহরে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) ও মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা এবং ওসিসির কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে সমপ্রসারণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নির্যাতনের শিকার নারীদের মানসিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের কার্যক্রম বৃদ্ধি করা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
১৯.৯ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সমাজের সকল পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১৯.১০ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে গণমাধ্যমে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
১৯.১১ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরুষ ও যুবকদেরকে সম্পৃক্ত করা।

২০. সশস্ত্র সংঘর্ষ ও নারীর অবস্থা
২০.১ সশস্ত্র সংঘর্ষ ও জাতিগত যুদ্ধে নারীর অধিকতর নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
২০.২ সংঘর্ষ বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
২০.৩ আনত্মর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশনে নারী প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করা।

২১. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
২১.১ নারী শিক্ষা বৃদ্ধি, নারী পুরুষের মধ্যে শিক্ষার হার ও সুযোগের বৈষম্য দূর করা এবং উন্নয়নের মূল ধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে শিক্ষা নীতি ২০১০ অনুসরণ করা।

২১.২ নারীর নিরক্ষরতা দূর করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা, বিশেষত: কন্যা শিশু ও নারী সমাজকে কারিগরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সকল বিষয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা।
২১.৩ কন্যা শিশুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপবৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখা।
২১.৪ মেয়েদের জন্যে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

২২. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
২২.১ ক্রীড়া ক্ষেত্রে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
২২.২ স্থানীয় পর্যায়ে নারীর জন্য পৃথক ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলা।
২২.৩ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
২২.৪ নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে নারীকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা।

২৩. জাতীয় অর্থনীতির সকল কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ
২৩.১ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নারী পুরুষের মধ্যে বিরাজমান পার্থক্য দূর করা।
২৩.২ অর্থনৈতিক নীতি (বাণিজ্যনীতি, মুদ্রানীতি, করনীতি প্রভৃতি) প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
২৩.৩ নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি লক্ষ্য রেখে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে ও কর্মসূচীতে নারীর চাহিদা ও স্বার্থ বিবেচনায় রাখা।
২৩.৪ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির প্রয়োগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার লক্ষ্যে নারীর অনুকূলে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা।
২৩.৫ সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া।
২৩.৬ শিক্ষা পাঠ্যক্রম, বিভিন্ন পুস্তকাদিতে নারীর অবমূল্যায়ন দূরীভূত করা এবং নারীর ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা।
২৩.৭ নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরী, শ্রম বাজারে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ ও কর্মস্থলে সমসুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চাকুরি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা।
২৩.৮ নারীর অংশগ্রহণ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীর অবদানের স্বীকৃতি দেয়া।
২৩.৯ জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান প্রতিফলনের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ সকল প্রতিষ্ঠানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২৩.১০ সরকারের জাতীয় হিসাবসমূহে, জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষি ও গার্হস্থ্য শ্রমসহ সকল নারী শ্রমের সঠিক প্রতিফলন ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করা।
২৩.১১ নারী যেখানে অধিক সংখ্যায় কর্মরত আছেন, সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা, বাসস্থান, বিশ্রামাগার, পৃথক প্রক্ষালনকক্ষ এবং দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২৪. নারীর দারিদ্র দূরীকরণ
২৪.১ হতদরিদ্র নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন-র্ভূক্ত করা, বিধবা ও দুঃস’ মহিলা ভাতা প্রণয়ন, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রণয়ন ও বিত্তহীন মহিলাদের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচী (ভিজিডি) অব্যাহত রাখা।
২৪.২ দরিদ্র নারী শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে তাদের সংগঠিত করা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নতুন এবং বিকল্প অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সৃষ্টি করা।
২৪.৩ দরিদ্র নারীকে উৎপাদনশীল কর্মে এবং অর্থনৈতিক মূলধারায় সম্পৃক্ত করা।
২৪.৪ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নারীর সকল চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
২৪.৫ জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে নারীর দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা্ গ্রহণে সহায়তা দান ও অনুপ্রাণিত করা।

২৫. নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জরুরী বিষয়াদি যথা;
২৫.১ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, জীবনব্যাপী শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ, তথ্য ও প্রযুক্তিতে নারীকে পূর্ণ ও সমান সুযোগ প্রদান করা।
২৫.২ উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা।

২৬. নারীর কর্মসংস্থান
২৬.১ নারী শ্রমশক্তির শিক্ষিত ও নিরক্ষর উভয় অংশের কর্মসংস’ানের জন্যে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২৬.২ চাকরি ক্ষেত্রে নারীর বর্ধিত নিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবেশ পর্যায়সহ সকল ক্ষেত্রে কোটা বৃদ্ধি এবং কার্যকর বাসত্মবায়ন নিশ্চিত করা।
২৬.৩ সকল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুসৃত কোটা ও কর্মসংস্থান নীতির আওতায় চাকরি ক্ষেত্রে নারীকে সকল প্রকার সমসুযোগ প্রদানের জন্য উদ্ধুদ্ধ করা।
২৬.৪ নারী উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণ করা।
২৬.৫ নারীর বর্ধিত হারে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ, অবস্থান ও অগ্রসরমানতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলা।
২৬.৬ নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল আইন, বিধি ও নীতির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা।

২৭. জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট এবং জেন্ডার বিভাজিত ডাটাবেইজ প্রণয়ন
২৭.১ নারী উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

২৭.২ জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট যথাযথভাবে বাস-বায়ন করা এবং মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামোর আওতায় তথা রাষ্ট্রীয় বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রক্রিয়া অনুসরণ অব্যাহত রাখা। বাজেটকৃত অর্থের সর্বোত্তম ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করার কাঠামো শক্তিশালী করা।
২৭.৩ জেন্ডার ভিত্তিক পৃথক তথ্য/উপাত্ত সংগ্রহ, সন্নিবেশ এবং নিয়মিত প্রকাশনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা কেন্দ্র, ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক তথ্য/উপাত্ত সংগ্রহকারী অঙ্গসমূহ নারীর অবস্তান ও ভূমিকা সম্বলিত জেন্ডার বিভাজিত ডাটাবেইজ গড়ে তুলবে। সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/দপ্তর, কর্পোরেশন, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সকল কাজের জন্যে জেন্ডার ভিত্তিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রকাশনার ব্যবস্থা করা।

২৮. সহায়ক সেবা
সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সহায়ক সেবা যেমন, শিশুযত্ন সুবিধা, কর্মস’লে শিশু দিবাযত্ন পরিচর্যা কেন্দ্র, বৃদ্ধ, অক্ষম, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্যে গৃহায়ন, স্বাস্থ্য, বিনোদনের ব্যবস্থা প্রবর্তন, সমপ্রসারণ এবং উন্নীত করা।
২৯. নারী ও প্রযুক্তি
২৯.১ নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, আমদানী ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে জেন্ডার প্রেক্ষিত প্রতিফলিত করা।
২৯.২ উদ্ভাবিত প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে নারীর স্বার্থ বিঘ্নিত হলে গবেষণার মাধ্যমে ঐ প্রযুক্তিকে নারীর প্রতি ক্ষতিকারক উপাদানমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২৯.৩ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর স্বার্থের অনুকূল লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করা।

৩০. নারীর খাদ্য নিরাপত্তা
৩০.১ দু:স্থ নারীর চাহিদা ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
৩০.২ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা, তত্ত্বাবধান ও বিতরণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৩০.৩ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নারীর শ্রম, ভূমিকা, অবদান, মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদান করা।

৩১. নারী ও কৃষি
৩১.১ কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারীর শ্রম ও অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী সর্বজনবিদিত। জাতীয় অর্থনীতিতে নারী কৃষি শ্রমিকের শ্রমের স্বীকৃতি প্রদান করা।
৩১.২ জলবায়ূ পরিবর্তন ও দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নারী কৃষি শ্রমিকদের সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা।
৩১.৩ কৃষিতে নারী শ্রমিকের মজুরী বৈষম্য দূরীকরণ এবং সমকাজে সম মজুরী নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩১.৪ কৃষি উপকরণ, সার, বীজ, কৃষক কার্ড, ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে নারী কৃষি শ্রমিকদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৩২. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
৩২.১ রাজনীতিতে অধিকহারে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যে প্রচার মাধ্যমসহ রাজনৈতিক দলসমূহকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করা।
৩২.২ নারীর রাজনৈতিক অধিকার অর্জন ও প্রয়োগ এবং এর সুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।
৩২.৩ রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে পর্যায়ক্রমে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৩২.৪ নির্বাচনে অধিকহারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুপ্রাণিত করা।
৩২.৫ নারীর রাজনৈতিক অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতন করা এবং তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ভোটার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।
৩২.৬ রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের তাগিদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে নারী সংগঠনসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রচার অভিযান গ্রহণ করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা।
৩২.৭ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা ও বর্ধিত সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৩২.৮ স্থানীয় সরকার পদ্ধতির সকল পর্যায়ে বর্ধিত সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৩২.৯ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার উচ্চ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী নিয়োগ করা।

৩৩. নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন
৩৩.১ প্রশাসনিক কাঠামোর উচ্চ পর্যায়ে নারীর জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশ সহজ করার লক্ষ্যে চুক্তিভিত্তিক এবং পার্শ্ব প্রবেশের ব্যবস্থা করা।
৩৩.২ প্রশাসনিক, নীতি নির্ধারনী ও সাংবিধানিক পদে অধিকহারে নারীদের নিয়োগ প্রদান করা।
৩৩.৩ জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গ সংগঠনে এবং অন্যান্য আনত্মর্জাতিক সংগঠনে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি বা প্রার্থী হিসেবে নারীকে নিয়োগ/ মনোনয়ন দেয়া।
৩৩.৪ নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রবেশপর্যায় সহ সকল পর্যায়ে, গেজেটেড ও নন-গেজেটেড পদে কোটা বৃদ্ধি করা।
৩৩.৫ সকল ক্ষেত্রে নারীর জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ সাপেক্ষে কোটা পদ্ধতি চালু রাখা।
৩৩.৬ কোটার একই পদ্ধতি স্বায়ত্বশাসিত ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্য করা এবং বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহকেও এই নীতি অনুসরণের জন্য উৎসাহিত করা।
৩৩.৭ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সুপারিশ অনুসারে সরকারের নীতি নির্ধারণী পদসহ সিদ্ধানত্ম গ্রহণের সকল সত্মরে নারীর সম ও পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শতকরা ৩০ ভাগ পদে নারী নিয়োগের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩৪. স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
৩৪.১ নারীর জীবন চক্রের সকল পর্যায়ে যথা, শৈশব, কৈশোর, যৌবন, গর্ভকালীন সময় এবং বৃদ্ধ বয়সে পুষ্টি, সর্বোচ্চ মানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য লাভের অধিকার নিশ্চিত করা।
৩৪.২ নারীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করা।
৩৪.৩ মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করা।
৩৪.৪ এইডস রোগসহ সকল ঘাতকব্যাধি প্রতিরোধ করা বিশেষত: গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসহ নারীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণা করা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৩৪.৫ নারীর পুষ্টি বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
৩৪.৬ জনসংখ্যা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাসত্মবায়নের ক্ষেত্রে নারীর প্রজনন সাস্থ্য ও প্রজনন অধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা।
৩৪.৭ বিশুদ্ধ নিরাপদ পানীয় জল ও পয়: নিস্কাশন ব্যবস্থায় নারীর প্রয়োজনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া।
৩৪.৮ উল্লেখিত সকল সেবার পরিকল্পনা, বিতরণ এবং সংরক্ষণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৩৪.৯ পরিবার পরিকল্পনা ও সনত্মান গ্রহণের সিদ্ধানেত্মর ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
৩৪.১০ নারীর স্বাস্থ্য, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, জন্ম-নিয়ন্ত্রণে সাহায্য, কর্মস্থলে মা’র কর্মক্ষমতা বাড়ানো ও মাতৃবান্ধব কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মায়ের বুকের দুধের উপকারিতার পক্ষে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩৪.১১ মায়ের দুধ শিশুর অধিকার, এই অধিকার (ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিশু প্রসবের সময় থেকে পরবর্তী ৬ মাস ছুটি ভোগের জন্য আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা এবং মাতৃত্বজনিত প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করা।

৩৫. গৃহায়ণ ও আশ্রয়
৩৫.১ পল্লী ও শহর এলাকায় গৃহায়ন পরিকল্পনা ও আশ্রয় ব্যবস্থায় নারী প্রেক্ষিত অনত্মর্ভুক্ত করা।
৩৫.২ একক নারী, নারী প্রধান পরিবার, শ্রমজীবী ও পেশাজীবীনারী, শিক্ষানবিশ ও প্রশিক্ষনার্থী নারীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ গৃহ ও আবাসন সুবিধা প্রদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা।
৩৫.৩ নারীর জন্য বিশেষ সুবিধা যেমন, হোস্টেল, ডরমিটরী, বয়স্কদের হোম, স্বল্পকালীন আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা এবং গৃহায়ন ও নগরায়ন পরিকল্পনায় দরিদ্র, দু:স্থ ও শ্রমজীবী নারীর জন্য সংরক্ষিত ব্যবস্থা করা।

৩৬. নারী ও পরিবেশ
৩৬.১ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশের নিরাপত্তায় নারীর অবদান স্বীকার করে পরিবেশ সংরক্ষণের নীতি ও কর্মসূচীতে নারীর সমান অংশগ্রহণের সুযোগ ও নারী প্রেক্ষিত প্রতিফলিত করা।
৩৬.২ পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগ্রহণ ও কর্মসূচী বাস্তবায়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৩৬.৩ কৃষি, মৎস্য, গবাদি পশুপালন ও বনায়নে নারীকে উৎসাহিত করা ও সমান সুযোগ প্রদান করা।

৩৭. দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নারী ও শিশুর সুরক্ষা
৩৭.১ দুর্যোগ পূর্ববর্তী সময়ে নারী ও কন্যা শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান ও কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩৭.২ নদী ভাঙ্গন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ নারী ও শিশুর পুনর্বাসন করা।
৩৭.৩ দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারীর নিরাপত্তা বিশেষভাবে বিবেচনা করা।
৩৭.৪ দুর্যোগের জরুরি অবস্থায় কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকরণের প্রাপ্যতা ও পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩৭.৫ দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় নারীদের বিপদ কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বস্তুগত সাহায্যের পাশাপাশি নারীর প্রয়োজনীয় মনো-সামাজিক সহায়তা প্রদান করা।
৩৭.৬ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরো নারী-বান্ধব করা এবং সুরক্ষার জন্য কর্মকৌশল প্রবর্তন করা।
৩৭.৭ দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থায় খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম যেন নারীর চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩৭.৮ দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি অবস্থায় খাদ্যের পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা।
৩৭.৯ গর্ভবতী ও প্রসূতি এবং নবজাতকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, যেমন ব্রেষ্ট ফিডিং কর্ণার রাখা।
৩৭.১০ দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নারী যে কমিউনিটি বা সমপ্রদায়ে বসবাস করে, উক্ত কমিউনিটি বা সমপ্রদায়ের সদস্যদেরকে দুর্দশাগ্রস্থ নারীর কল্যাণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।

৩৮. অনগ্রসর ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি নারীর জন্য বিশেষ কার্যক্রম
৩৮.১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও অনগ্রসর নারীর উন্নয়ন ও বিকাশের সকল অধিকার নিশ্চিত করা।
৩৮.২ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি নারী যাতে তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রেখে বিকাশ লাভ করতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩৮.৩ অনগ্রসর নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা।

৩৯. প্রতিবন্ধী নারীর জন্য বিশেষ কার্যক্রম:
৩৯.১ জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী অধিকার সনদ অনুযায়ী সকল ধরনের প্রতিবন্ধী নারীর স্বীকৃতি ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা।
৩৯.২ প্রতিবন্ধী নারীদের সমাজের মূলধারায় একীভূত রাখা এবং শিক্ষাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতার ভিন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা।

৩৯.৩ যে সমস্ত নারী অনিবার্য কারণে শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না, শুধুমাত্র সেইসব নারীর জন্য বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা বিবেচনা করা।
৩৯.৪ প্রতিবন্ধী নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৩৯.৫ প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ ও নির্ণয়ের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ এবং পারিবারিক পরিবেশে প্রতিবন্ধী নারীদের লালন পালন ও বিকাশের জন্য তাদের পরিবারকে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করা।
৩৯.৬ প্রতিবন্ধিতার কারনে কোন নারী যেন জাতীয় নারী নীতির আওতায় কোন প্রকার অধিকার, সুবিধা ও সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে সকল অবকাঠামো, সুবিধা ও সেবাসমূহ সকলের জন্য প্রবেশগম্য করা।

৪০. নারী ও গণমাধ্যম
৪০.১ গণমাধ্যমে নারীর সঠিক ভূমিকা প্রচার করা, প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং অংশগ্রহণের বৈষম্য দূর করা, গণমাধ্যমে নারী ও কন্যা শিশুর বিষয়ে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪০.২ নারীর প্রতি অবমাননাকর, নেতিবাচক, সনাতনী প্রতিফলন এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪০.৩ বিভিন্ন গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনা ও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণে নারীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।
৪০.৪ প্রচার মাধ্যম নীতিমালায় জেন্ডার প্রেক্ষিত সমন্বিত করা।

৪১. বিশেষ দুদর্শাগ্রস্থ নারী
যদি কোন নারী বিশেষ পরিস্থিতির কারনে দুর্দশাগ্রস্থ হন তাহলে তার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সহায়তা প্রদানের জন্য পদক্ষেপ ও কর্মসূচী গ্রহণ করা।
তৃতীয় ভাগ
৪২. প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও কৌশল

নারী উন্নয়ন নীতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব সরকারের। একটি সুসংগঠিত ও সুবিন্যস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার মাধ্যমে এ দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ের কর্মকান্ডে নারী উন্নয়ন প্রেক্ষিত অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রচেষ্টা নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে:
৪২.১ জাতীয় পর্যায়
ক) নারী উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো: নারীর সমতা, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় অবকাঠামো যেমন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের জনবল ও সম্পদ নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাঠামো বিস্তৃত করা হবে। নারী উন্নয়নের যাবতীয় কর্মসূচী প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্যে এ প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
খ) জাতীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন পরিষদ : নারী উন্নয়ন নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ৫০ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এ পরিষদে কার্যপরিধি নিম্নরূপঃ
(১) আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়,বিভাগ ও সংস্থার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন।
(২) শিশুর স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা এবং শিশু কল্যাণের নিমিত্ত সার্বিক নীতি নির্ধারণ ও অধিকার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনবোধে নূতন আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনসমূহের সময়োপযোগী সংশোধন ও পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ প্রণয়ন।
(৩) নারী ও শিশু উন্নয়নের জন্য প্রণীত কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
(৪) নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডো) ও শিশু অধিকার সনদের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ।
(৫) মহিলাদের আইনগত অধিকার, মহিলা উন্নয়ন এবং মহিলাদের নির্যাতন প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়াবলী সম্বন্ধে নীতি প্রণয়ন।
(৬) সকল কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের স্বার্থ সংরক্ষণ, অংশগ্রহণ ও তাদের ভাগ্যোন্নয়ন সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
(৭) পরিষদ ৬ (ছয়) মাস অন্তর সভায় মিলিত হবে।
গ) সংসদীয় কমিটি: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক গঠিত নারী উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নারী উন্নয়ন কর্মসূচী পর্যালোচনা করে নারী অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারকে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান করবে।

ঘ) নারী উন্নয়নে ফোকাল পয়েন্ট: বিভিন্ন ফোকাল পয়েন্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির আলোকে কর্মসূচী গ্রহণ, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থায় নারী উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা যায় সে জন্যে ঐ প্রতিষ্ঠানসমূহে ন্যূনতম পক্ষে যুগ্ম-সচিব/যুগ্ম-প্রধান পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে মনোনীত করা হবে। নারী উন্নয়ন কার্যক্রমের নিয়মিত মনিটরিং এর উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার মাসিক এডিপি পর্যালোচনা সভা ও মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হবে। তাছাড়া,ফোকালপয়েন্ট মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ সংস্থার কার্যক্রমে যাতে জেন্ডার প্রেক্ষিত প্রতিফলিত হয় ও তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও দলিলসমূহে জেন্ডার বিষয়ে সুস্পষ্ট ও পর্যাপ্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয় সে লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
ঙ) মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রীকে সভাপতি এবং নারী উন্নয়নে চিহ্নিত ফোকাল পয়েন্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারী-বেসরকারী নারী উন্নয়নমূলক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি “নারী উন্নয়ন বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন কমিটি” গঠন করা হবে। এই কমিটি নারী উন্নয়ন সম্পর্কিত কর্মসূচী পর্যালোচনা, সমন্বয় ও মূল্যায়ন করবে। কমিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমস্যা চিহ্নিত করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচী দ্রুত বাস-বায়নের জন্যে পরামর্শ প্রদান করবে।
৪২.২ জেলা ও উপজেলা পর্যায়

নারীর অগ্রগতি এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, স্থানীয় সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দপ্তর ও এনজিওদের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন ও নারী উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। জেলা পর্যায়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নারী উন্নয়নকল্পে গৃহীত সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দায়িত্ব পালন করবে।
৪২.৩ তৃণমূল পর্যায়

তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম ও ইউনিয়নে নারীকে স্বাবলম্বী দল হিসেবে সংগঠিত করা হবে। এ দলসমূহকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার আওতায় নিবন্ধীকৃত সংগঠন হিসেবে রূপ দেয়া হবে। সরকারি, বেসরকারি উৎস, ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণ করে এ সংগঠনগুলোর সাথে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন সমূহের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ও সমন্বয় সাধন করা হবে। উপরন্ত, তৃণমূল পর্যায়ের সকল সংগঠনের কার্যক্রমের স্থানীয় উন্নয়নের প্রেক্ষিত অন্তর্ভুক্তির জন্যে উৎসাহিত এবং সহায়তা প্রদান করা হবে।
৪৩. নারী উন্নয়নে এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে সহযোগিতা

প্রকৃত নারী উন্নয়ন একটি ব্যাপক কাজ। এই কাজে সরকারি-বেসকারী উদ্যোগের সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াস নেয়া হবে যাতে করে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠন সমূহকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া হবে:
ক. গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে নারী উন্নয়নের সকল স্তরে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্তকরণ ও তাদের কর্মকান্ডের সাথে সমন্বয় সাধন করা হবে। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সহায়ক সেবা প্রদান করা হবে। সরকারি সকল কর্মকান্ডে তাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে। নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় যথোপযুক্ত ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস-বায়ন করা হবে।

খ. জাতীয় থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নারী উন্নয়ন, নারী অধিকার সংরক্ষণ, সচেতনতা সৃষ্টি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, আইনগত সহায়তাদান এবং এ জাতীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নরত নারী সংগঠন সমূহকে শক্তিশালী করার জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে। উল্লেখিত ধরণের কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারী সংগঠন সমূহের সাথে সহায়তা ও সমন্বয় করা হবে।
৪৪. নারী ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক গবেষণা

নারী উন্নয়ন ও সমতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষনা পরিচালনার জন্যে দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং নারী ও শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা পরিচালনায় উৎসাহিত করা হবে। পৃথক জেন্ডার গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। সেখান থেকে নীতি নির্ধারকদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হবে।
৪৫. নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান

ঢাকায় বিদ্যমান নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণসহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এসব কেন্দ্রে বিভিন্ন কারিগরী, বৃত্তিমূলক, নারী অধিকার এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
৪৬. কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচীগত কৌশল
৪৬.১ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা এবং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি সংগঠনসমূহ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্যে কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
৪৬.২ সকল মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ সংস্থার নিজ নিজ কর্ম-পরিকল্পনায় জেন্ডার প্রেক্ষিতের প্রতিফলন ঘটানো হবে যাতে করে সকল খাতে নারীর সুষম অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।
৪৬.৩ সকল কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে।
৪৬.৪ মনিটরিং ও মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে সকল কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্মসূচীর অগ্রগতি নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যালোচনা করা হবে।
৪৬.৫ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ সংস্থার কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্মসূচীতে যাতে নারী প্রেক্ষিত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় সে লক্ষ্যে কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়নকারী কর্মকর্তাবৃন্দকে পিএটিসি, প্লানিং একাডেমী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে জেন্ডার এবং উন্নয়ন বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে পাঠ্যসূচীতে ও কোর্সে জেন্ডার ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৪৬.৬ নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা কর্মসূচীর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। এই সচেতনতা কর্মসূচীতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে (১) আইনবিধি ও দলিলাদি থেকে নারীর মর্যাদাহানিকর বক্তব্য ও মন্তব্য অপসারণ (২) মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কার্যনির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নীতি নির্ধারক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দের সচেতনতা এবং (৩) নারী-পুরুষের সম্পর্ক, অধিকার ও নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়াবলী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ের উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে।

৪৬.৭ সমাজের সকল স্তরে বিশেষভাবে প্রণীত এবং সুষ্ঠু অর্থায়নের ভিত্তিতে নারী বিষয়কে সংবেদনশীলকরণ কর্মসূচী নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন, বিশেষতঃ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং সরকারি-বেসকারী সকল উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। নারীর বিষয়ে সংবেদনশীলকরণ কর্মসূচী সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে সকল চলতি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে পর্যায়ক্রমে সমন্বিত করা হবে।
৪৬.৮ নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কর্মসূচীর উপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এ উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত কর্মসূচী গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। সে সব কর্মসূচীতে সচেতনতা, আইনগত পরামর্শ ও শিক্ষা, শাসি-মূলক ব্যবস্থা তথা মামলা পরিচালনা করা, মামলা পরিচালনার জন্যে নিরাপদ আশ্রয় ও পুনর্বাসন, আর্থিক সহায়তা ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ কৌশল হিসেবে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলসহ অন্যান্য নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের কর্মপরিধিকে বিস্তৃত ও শক্তিশালী করা হবে।
৪৭. আর্থিক ব্যবস্থা
৪৭.১ তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
৪৭.২ জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামোর আওতায় তথা রাষ্ট্রীয় বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রক্রিয়া (জিআরবি) অনুসরণ অব্যাহত রাখা হবে। বাজেটকৃত অর্থের সর্বোত্তম ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করার কাঠামো শক্তিশালী করা হবে।
৪৭.৩ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জেন্ডার সংবেদনশীল নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
৪৭.৪ জাতীয় পর্যায়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে। নারী উন্নয়নে নিয়োজিত মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা যেমন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, শ্রম ও জনশক্তি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি মন্ত্রণালয়ে নারী উন্নয়নের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মসূচী চিহ্নিত করে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করা হবে।
৪৭.৫ পরিকল্পনা কমিশন সকল খাতে বিশেষ করে শিক্ষা, শিল্প, গৃহায়ন, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য উপ-খাতে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক ভৌত ও আর্থিক সম্পদ চিহ্নিত করে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
৪৭.৬ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ নারী উন্নয়নে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে নতুন ও অতিরিক্ত আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৪৭.৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারী নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

৪৮. সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা

নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যনত্ম সর্বস্তরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার যোগসূত্র গড়ে তোলা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহকে যথোপযুক্ত এবং সময়োপযোগী সহায়তা প্রদান করা হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ, বৈঠক/কর্মশালা ইত্যাদির মাধ্যমে এই আদান প্রদান চলবে। ক্ষেত্র বিশেষে সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে নারী উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
৪৯. নারীর ক্ষমতায়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতা এবং অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হবে।

3 thoughts on “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি- ২০১১

  • August 18, 2016 at 2:44 am
    Permalink

    আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন পূর্বে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক “রাজু” নামের একজন ছেলের বিবাহ হয়।। কিছুদিন পর জানিতে পারি তাহার প্রথম স্ত্রী রয়েছে।। এরপর সে যৌতুকের জন্য আমাকে অনেক নির্যাতন করেছে।। বর্তমানে অনেক টাকা দাবী করতেছে এবং আমার কোনো খোজ খবরও নিচ্ছেনা।। সংখেপে লিখলাম।। এই ব্যাপারে কি আপনাদের কাছ থেকে আমি কোনো আইনি সাহায্য পেতে পারি কিনা?? যদি থাকে জানাবেন।।
    ইতি,,
    রুজীনা,,
    জোড়পুল,,
    সাভার থানা।।

    Reply
  • November 17, 2017 at 5:50 pm
    Permalink

    আসসালামু আলাইকুম, আপনাদের কে কোন তথ্য দিলে তা কি আপনারা প্রচার করবেন?
    অনুগ্রহ করে জানাবে
    মেইল করতে পারেন…. rezaulislamhtc@gmail.com

    Reply
  • November 17, 2017 at 5:55 pm
    Permalink

    একটি মেয়ে ৪ মাসের অন্তস্ততা মেয়েটি পরিবার সেই অনাগত সন্তান কে নষ্ট করতে মেয়েটিকে খুব মানসিক চাপ দিচ্ছে
    “জাতীয় নারী উন্নয়ন টি কি ওই মেয়েটির পাশে দাঁড়াবে?

    Reply

Leave a Reply to রুজীনা আক্তার Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.