এল,জি,ই,ডি মিলনায়তন, ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আমাদের অঙ্গীকার
বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের চতুর্থ জাতীয় কনভেনশন থেকে আমরা, তৃণমূলের একদল নারী সংগঠক নারী-পুরুষের সমতা ভিত্তিক ক্ষুধামুক্ত, আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় পুন:ব্যক্ত করছি। আমরা এমন একটি টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ জীবন গঠনের সুযোগ সৃষ্টি পাবে। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের থাকবে স্বচ্ছল ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন গঠনের অধিকার। সমাজের প্রতিটি স্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় থাকবে নারীর অন্তর্ভূক্তি ও সমঅংশগ্রহণ। সকলের জীবন হবে নিরাপদ। এই প্রত্যাশাকে ধারণ করে, তৃণমুলে নারী নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে আমরা যে গণজাগরণ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি তা বেগবান করার লক্ষ্যে এই কনভেনশন থেকে আমরা কতকগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের, বিশেষতঃ নারীদের সচেতন, সক্রিয় ও সংগঠিত করে তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে আমাদের প্রত্যাশিত আত্মনির্ভরশীল ভবিষ্যৎ অর্জন করা সম্ভব। আর এ উপলব্ধি থেকে আমরা স্বেচ্ছাব্রতী হয়ে সারা দেশে অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিম্নোক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি।
আমরা দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করছি যে,
১। বিকশিত নারী’ নেটওয়ার্কের একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আমরা প্রত্যেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিজেদের জয় এবং অন্যদের যুক্ত করার মধ্য দিয়ে সকলের সৃজনশীলতা ও অন্তর্নিহিত শক্তির সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাব, যাতে এ প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিতে সকলেই সক্ষম হয়ে উঠে।
২। জনগণ ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে তৃণমূলের পিছিয়ে পড়া নারীদের বঞ্চনা-নিগ্রহের অবসানের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করব।
৩। আমরা নিজ অবস্থান থেকে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে নারী ও শিশু পাচার এবং পারিবারিক নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব এবং সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
৪। বৈশ্বিক ও জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে আমরা নিজ এলাকায় সামজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে নিজেদের এলাকায় যৌতুক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ,স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাষণ ও নিরাপদ পানির ব্যবহার, গর্ভবতী মায়ের যত্ম ও নিরাপদ মাতৃত্ব, স্কুল বয়সী প্রতিটি শিশুর স্কুলে ভর্তি এবং জন্ম ও বিবাহ নিবন্ধন নিশ্চিত করার ব্যাপারে সোচ্চার ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব।
৫। মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সুষম খাবার খাওয়ার ব্যপারে সচেতন গড়ে তুলব।এ লক্ষ্যে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজী বাগান করব জন্য সকলকে উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করব।
৬। ‘যেখানে উত্ত্যক্তকারী সেখানেই প্রতিরোধ’ এ শ্লোগানকে ধারণ করে, উত্ত্যক্ততা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব।
৭। গণতন্ত্র, সুশাসন ও টেকসই উন্নয়নের শর্তসমূহের একটি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। নারী নেতৃত্ব বিকাশে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল স্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করব। তাই স্থানীয় সরকারের সকল স্তরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে নিজেদেরকে প্রস্তুত করব। একই সঙ্গে সৎ, যোগ্য ও সঠিক প্রার্থী যাতে নির্বাচিত হন, তার জন্য জনগণ, বিশেষত নারীদের সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব।
৮। কন্যাশিশু বোঝা নয়, বরং সম্পদ’ এ বোধ গড়ে তোলার ব্যাপারে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করব। যাতে করে কন্যাশিশু জন্ম থেকেই সকল সুযোগ নিশ্চিত হয়। একই সাথে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরেপড়া রোধ করাসহ কন্যাশিশুর সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের প্রতিভা বিকাশের সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলব।
৯। সমমনা অন্যদের সঙ্গে বিকশিত নারী নেটওয়ার্ককে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সেতুবন্ধন সৃষ্টি করব। নেটওয়ার্কের শক্তিকে আরো জোরদার করার জন্য পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে স্থানীয় নারী সংগঠন গড়ে তুলব ও তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করব;
১০। নেটওয়ার্কের সদস্য হিসেবে আমরা নিজ নিজ এলাকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ উদযাপনে কার্যকর উদ্যোগ নেব। বিশেষত: আন্তর্জাতিক নারী দিবস, আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস রোকেয়া দিবস এবং জাতীয় কন্যাশিশু দিবস অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করব।
আমরা প্রতিশ্র“তি প্রদান করছি যে, আমাদের এ প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিতে কোন বাধাকেই আমরা বাধা মনে করব না।
বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সদস্যবৃন্দ
সহযোগিতায়:দি হাঙ্গার প্রজেক্ট
