করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারা বিশ্বকে আজ এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিটি দেশ নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে অপ্রতুল সম্পদ সত্ত্বেও এই দেশের মানুষ করোনাভাইরাস মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। এই দেশের উত্তর জনপদের এমনই একজন চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী মানুষ সৈয়দা রুখসানা জামান শানু।
নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় বসবাসকারী শানু, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় উপজেলার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কলম-সৈনিক হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে নির্মোহ-দৃষ্টিতে সংবাদ সংগ্রহ করেন তিনি। তাঁর এই সততার পথে গতি সঞ্চার করে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের “নারী নেতৃত্ব বিকাশ” প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আরো বেশি আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে শানুকে। সংকল্পের দৃঢ়তা বাড়িয়ে দেয় তাঁর কর্মপরিধি। বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক, নীলফামারী জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে অধিকার বঞ্চিত নারীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেন শানু।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে কোনো দুর্যোগে নারী, কিশোরী ও শিশুরা সর্বাধিক সহিংসতার শিকারে পরিণত হয়। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে, ‘লক ডাউনে’র কারণে কর্মহীন ও উপার্জনবিহীন মানুষের মাঝে সৃষ্টি হওয়া হতাশা আর উৎকণ্ঠার খেসারত হিসেবে, সংসারের নারী ও কিশোরীদের অধিকহারে পারিবারিকভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে।
সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্যাতিত নারী ও কিশোরীদের ন্যায্য বিচার আদায়ে শানু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই সংকটকালে একজন কর্মহীন নারীর সাথে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার করে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন তিনি। একই সাথে সালিসীর মাধ্যমে ৩০টি পরিবারে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ করেছেন।
করোনার এই সংক্রমণের দিনে, তাঁর কলম হয়েছে সচেতনতার অস্ত্র। মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য লিখে এলাকাবাসীর মাঝে তিনি লিফলেট বিতরণ করেছেন।
মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তিনি বাঁশবাড়ী এলাকার গৃহবন্ধী হতদরিদ্র ২৫টি পরিবারের তালিকা করেছেন। এই পরিবারগুলোতে তিনি নিজে গিয়ে নগদ ১০০০ হাজার টাকা উপহার হিসেবে ২৫ জন নারীর হাতে তুলে দিয়েছেন। এছাড়া আরো ১০টি হতদরিদ্র পরিবারে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন (প্রতি পরিবারে চাল ১০ কেজি, ডাল ২ কেজি, আলু ৫ কেজি, তেল ২ লিটার, সাবান ২টি) ।
শুধু সৈয়দপুর বা নীলফামারী নয়, লকডাউনের কারণে দেশব্যাপী কর্মহীন হতদরিদ্র পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। দেশের নানা প্রান্তে তাঁর পরিচিত ৩০টি হতদরিদ্র পরিবারে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ৯০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে সহায়তা করেছেন।
করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগ একদিন থেমে যাবে, স্বাভাবিক হবে জনপদের জীবনযাপন। তবে করোনাভাইরাস, মানবিকতার পথ আমাদের যেমন দেখিয়েছে, তেমনি বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সেই মহানুভব মানুষগুলোকেও আমরা চিনেছি। সৈয়দা রুখসানা জামান শানু বিশ্বাস করেন, দৃঢ়চেতা ও আত্মপ্রত্যয়ী মানুষের দৃঢ়তাব্যঞ্জক পদক্ষেপে, বাংলাদেশের মানুষ উজ্জীবিত ও সংগঠিত হয়ে, নিশ্চয়ই একদিন করোনাকে জয় করবে।