এসডিজি

২০১৫ সনের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ‘২০৩০ এজেন্ডা’ গৃহীত হয়। সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ‘২০৩০ এজেন্ডা’ এমন একটি কর্ম-পরিকল্পনা যা বিশ্ব শান্তি জোরদার করবে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যসহ সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটাবে। অতি দারিদ্র্যসহ সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান ঘটানোই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, আর এটাই হলো টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। আগামী প্রায় দেড় দশক বিশ্বের সকল দেশ এই অভীষ্টগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে যার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জনগণের সকল ধরনের দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে; সকল ধরনের বৈষম্যের অবসান ও অসমতা হ্রাসের গুরু দায়িত্ব পালন করাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার কাজ এগিয়ে নেয়া যাবে। আর এসব কর্মকান্ডের মূলমন্ত্র হবে “কাউকে পশ্চাতে রেখে নয় ((No one will be left behind)’’ নীতি অনুসরণ।

এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট এবং এর ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্বের প্রায় সকল দেশ একমত হয়েছে জাতিসংঘের এক সাধারণ সভায়। আমাদের সরকার প্রধানও সে সভায় ছিলেন এবং এগুলি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন।

একনজবে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত এসডিজি বা বৈশ্বিক অভীষ্টসমূহ;

১. দারিদ্র বিমোচন [No Poverty]: সর্বত্র এবং সবধরণের দারিদ্রতা দূর করা;

২. ক্ষুধামুক্তি [Zero Hunger]: ক্ষুধা দূর করা, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টি অর্জন, এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা চালু করা;

৩. সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ [Good Health & Well-being]: স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করা এবং সব বয়সের সকলের জন্য কল্যাণ বৃদ্ধি;

৪. মানসম্মত শিক্ষা [Quality Education]: অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাপূর্ণ ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষা সুযোগ সৃষ্টি;

৫. জেন্ডার সমতা [Gender Equality]: জেন্ডার সমতা অর্জন করা এবং সব নারী ও তরুণীর ক্ষমতায়ন;

৬. বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন [Clean Water & Sanitation]: সবার জন্য পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সুযোগ এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনা; ।

৭. ব্যয়সাধ্য ও টেকসই জ্বালানি [Affordable & Sustainable Energy]: সবার জন্য ব্যয়সাধ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং আধুনিক জ্বালানির সুযোগ নিশ্চিতকরণ;

৪. সবার জন্য ভালো কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি [Decent Work & Economic Growth]: সবার জন্য টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং ভালো কাজ নিশ্চিতকরণ;

৯. শিল্প, উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো [Industry, Innovation & Infrastructure]: দীর্ঘস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই শিল্পায়ন এবং উদ্ভাবনকে প্রেরণা দেওয়া;

১০. বৈষম্য হ্রাসকরণ [Reduced Inequalities]: দেশের ভেতরে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বৈষম্য দূর করা;

১১. টেকসই শহর ও সম্প্রদায় [Sustainable cities and Communities]: শহর এবং মানুষের বাসস্থানকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই করে তোলা;

১২. সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহার [Responsible Consumption & Production]: টেকসই ভোগ ও উৎপাদন রীতি নিশ্চিত করা;

১৩. জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ [Climate Action]: জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ;

১৪. সমুদ্রের সুরক্ষা [Life below Water]: টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার;

১৫. ভূমির সুরক্ষা [Life on Land]: ভূমির উপরিস্থ পরিবেশ-ব্যবস্থার সুরক্ষা, পুনঃস্থাপন এবং টেকসই ব্যবহার; টেকসই বন ব্যবস্থাপনা; মরুকরণ রোধ ও বন্ধ করা; ভূমিক্ষয় রোধ করা এবং জীববৈচিত্রের ক্ষতি বন্ধ করা;

১৬. শান্তি ও ন্যায়বিচার [Peace, Justice & Strong Institutions]: টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা; সকলের জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ সৃষ্টি; এবং সর্বস্তরে কার্যকর, জবাবদিহি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা;

১৭. লক্ষ্য অর্জনের জন্য অংশিদারিত্ব [Partnerships for the Goals]: বাস্তবায়নের উপায়গুলো শক্তিশালী করা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশিদারিত্ব পুনর্জীবিত করা।