সাফল্যগাথা

সমাজের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করছেন নারীনেত্রী শাহিনারা বিবি

প্রত্যেক মানুষের বিশেষ কিছু প্রতিভা থাকে, যা তাকে অনন্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে আত্মশক্তির বিকাশ মানুষকে মানবিক ও কর্মঠ করে তোলে। প্রতিভা এবং আত্মশক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজ উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারা মানুষেরা স্থাপন করেন অনন্য দৃষ্টান্ত। এমনই একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নারীনেত্রী শাহিনারা বিবি। শাহিনারার জন্ম রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলাধীন জাহানাবাদ ইউনিয়নের নওনগর গ্রামে। গ্রামের ছায়া সুনিবিড় সুশীতল পরিবেশে বেড়ে উঠতে উঠতে গ্রামকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন। বিয়ে নিজ গ্রামেই হয়েছে। বিবাহিত জীবনে ২ সন্তানের জননী তিনি। স্বামী কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসার পরিচালনায় শাহিনারা গ্রামের অপরাপর নারীদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। তার ভিন্নতার পেছনে অবশ্য রয়েছে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের নারী নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী নারীদের অবস্থা ক্রমে খারাপ হতে থাকে।

পারিবারিক সহিংসতা এবং নারীর প্রতি বিরুপ আচরণ চরম আকার ধারণ করে। এমনই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে জাহানাবাদ ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ড সদস্য আতাউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের ১৬৬তম নারীনেতৃত্ব বিকাশ ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন শাহিনারা। প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো প্রতিটি তার হৃদয়াকাশে দোলা দিয়ে যায়। নারীর অধঃস্তনতা এবং পুরুষতন্ত্র বিষয়ক আলোচনা তাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। তিনি সমাজে নারীর অবস্থা ও অবস্থান সুদৃঢ় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। নারীনেত্রী হিসেবে তিনি সমাজের উন্নয়ন ও আগামী প্রজন্মের সুষ্ঠভাবে বেড়ে ওঠা ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বাল্যবিবাহ নিরোধ, অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তিকরণসহ বিভিন্ন ধরনের উঠানবৈঠক পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন। তার পদক্ষেপের কারণে ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনে এলাকার মানুষজন তাকে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে ভোটে দাঁড় করিয়ে দেয়। জনগনের চাহিদার প্রতিফলন হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। নারীনেত্রী থেকে জনপ্রতিনিধি দায়িত্বটা এবার একটু বেশি। ইউনিয়ন পরিষদের নারী ও শিশুকল্যাণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। জনগনের জন্য শাহিনারা কাজ করতে থাকেন।

বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারিতে এলাকার মানুষ আতংকিত হয়ে ওঠে। আতংকগ্রস্থ মানুষকে স্বাভাবিক জীবনের বিপরীতে সুরক্ষিতভাবে জীবনযাপনে চলাচলের অভ্যাভ গড়ে তুলতে নানাবিধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। শাহিনারার নেতৃত্বে নওনগর, ভিমনগর, করিশাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে জীবাণূনাশক স্প্রে, হতদরিদ্র ১২৩টি পরিবারকে সাবান ও মাস্ক বিতরণ, ৪০০টি লিফলেট বিতরণ করেন এবং সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাচলের নিমিত্তে গ্রামে গ্রামে তরুণদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে গ্রাম লকডাউন করেন।

পাশাপাশি সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া এমন ১৮৭টি পরিবারে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন (জনপ্রতি চাল-১০কেজি, ঢাল-১ কেজি, আলু -১ কেজি তেল ২/১ লিটার ,সাবান ১টি ও মিষ্টিকুমড়া ১টি)  ।

মানুষ যে আকাঙ্খা নিয়ে শাহিনারাকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল আজ তিনি তা কর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, এবং তিনি মানুষের আস্থাকে নিজের কর্তৃব্য মনে করে দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছেন। গ্রামের গৃহবধু থেকে জনগণের আস্থার শাহিনারাদের জন্যই বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় এবং করোনা সহনশীল হিসেবে গড়ে উঠতে সামগ্রীক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।