সাফল্যগাথা

আত্মপ্রত্যয়ী নারীনেত্রী বিভারাণী রায় এখন স্বাবলম্বী
biva_raniবিভারাণী রায়, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক -এর একজন সক্রিয় নারীনেত্রীর নাম। একটা সময় গেছে যখন দু বেলা পেট ভরে খেতে পাননি। আর এখন আত্মপ্রত্যয় আর কঠিন পরিশ্রমের ফলস্বরূপ তিনি এবং তার পরিবার অনেকটাই স্বচ্ছল দিনযাপন করছেন।
বিভারাণী ১৯৭৫ সালের ১০ মার্চ বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার মলুহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত জতীন চন্দ্র ডাকুয়া ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক, আর মা মালতী ডাকুয়া একজন গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বিভারাণী রায় তৃতীয়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ভর্তি হন স্থানীয় পালাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু কৃষিভিত্তিক পরিবারের কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে বিভারাণীকে বেশিদূর লেখাপড়া করতে দেওয়া হয়নি। অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর ১৯৮৯ সালে মাত্র তের বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। তার স্বামীর নাম বিনোদ চন্দ্র রায়, যিনি পেশায় একজন কৃষক। শ্বশুর বাড়ি এসে বিভারাণী রায় জানতে পারেন যে, তার স্বামী এর আগে আরও একটি বিয়ে করেছিলেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী মারা যান। এসব জানার পর বিভারাণীর বাবা তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসেন। কিন্তু মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়, এমন চিন্তা থেকে তিনি তা করা থেকে বিরত থাকেন। এরপর বাধ্য হয়ে স্বামী ও দু সন্তানকে সাথে নিয়ে স্বামীর সংসারেই অবস্থান করেন বিভারাণী রায়। তার স্বামীর সংসারের প্রতি তার কোনো মনোযোগ ছিল না। যে কারণে সদা সর্বদা সংসারে আর্থিক অনটন লেগেই থাকতো। এমনও সময় গেছে যখন দু বেলা পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ পাননি বিভারাণী। এত কষ্টের মধ্যেও তিনি সৎ ছেলে-মেয়ে দুটোকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বিয়ের ১২ বছর পর তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী হন। বর্তমানে মেয়েটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে আর একমাত্র ছেলে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে।

বিভারাণী রায় চলতি বছরের শুরুতে (২০১৪ সাল) বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক আয়োজিত ৮১তম ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে তিনি বুঝতে পারেন- তিনিও মানুষ, তারও পরিবার ও সমাজে ভালভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তিনিও হতে পারেন স্বাবলম্বী। অন্য নারীদের জন্য অনুকরণীয় একজন নারী। এ সময় তিনি চিন্তা করতে থাকেন যে, তার পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য তাকে কিছু করতে হবে। যে ভাবা সেই কাজ। তিনি হোগলা পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে ব্যাগ, পাটি, পাখা, রান্নার ধরনি ও ছিকা ইত্যাদি তৈরি করতে থাকেন এবং সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। তার নিজের কোন আবাদি জমি না থাকায় তাকে হোগলা পাতা ক্রয় করে আনতে হয়। এ কাজ করে তার বর্তমানে মাসিক প্রায় ছয় হাজার টাকা আয় হয়। যার ফলে তার পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা।

বিভারাণী রায় মনে করেন, ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ প্রশিক্ষণ তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে। এ আত্মবিশ্বাস আর আত্মপ্রত্যয়কে কাজে লাগিয়েই তিনি এখন স্বাবলম্বী।