সারাদেশের সহস্রাধিক বলিষ্ঠ নারীনেত্রী অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শোকো ইশিকাওয়া।
সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ক্যাথি বার্ক এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর ডিরেক্টর জনাব নাছিমা আক্তার জলি। সভাপতিত্ব করেন বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি রাশেদা আখ্তার।
উপস্থিত নারীনেত্রীদের উদ্দেশ্যে শোকো ইশিকাওয়া বলেন, ‘আপনাদের মধ্যকার শক্তি ও উদ্যম আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। আপনারা এখানে ১২০০ জন নারীনেত্রী এসেছেন, কিন্তু আপনাদের পেছনে রয়েছে লক্ষাধিক নারী।’ তৃণমূলের নারীদের প্রশিক্ষিত ও সংগঠিত করে তোলার জন্য তিনি দি হাঙ্গার প্রজেক্টকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আগামী বছর বেইজিং প্লাস ফাইভ সম্মেলনের ২৫ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এই উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে আমরা নারীদের অবদান তুলে ধরতে চাই। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এই অর্জনের ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অসামান্য। বাংলাদেশের নারীরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয় রয়েছে, নারীরা ক্রিকেট খেলছে এবং হিমালয় জয় করছে। আমি আশা করি, সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।’
উপস্থিত নারীনেত্রীদের উদ্দেশ্যে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সাথে যুক্ত হয়ে আপনারা নিজের জীবন, আপনার পরিবারের আপনজনদের জীবন এবং সমাজের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ হতে পারে না। আপনাদের সত্যিই অসাধারণ ও অতুলনীয় কাজ করছেন। আপনাদের কাজ আমাকে সাহস যোগায়, আমি ক্ষমতায়িত হই।’ তিনি বলেন, আজ আপনার সংগঠিত শক্তি, আপনারা একা নন। আমি আশা করি, সমাজ উন্নয়নে আপনাদের বর্তমান কাজ অব্যাহত থাকবে।’ তিনি জানান, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে সারাদেশের প্রায় নয় হাজার নারী ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন, যারা তৃণমূল পর্যায়ে স্বেচ্ছায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ক্যাথি বার্ক বলেন, ‘আমি ২১ বছর আগে প্রথম বাংলাদেশে আসি। এরপর যতবারই আমি বাংলাদেশে এসেছি, ততবারই আমি নতুন উদ্দীপনা পেয়েছি। এই উদ্দীপনা আমাদেরকে নারী-পুরুষের জন্য একটি সমতাপূর্ণ বিশ^ গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়, পথ দেখায়। আমার লেখা একটি বইতে আমি বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো তুলে ধরেছি।’ নিজের জীবন উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তিনি উপস্থিত নারীনেত্রীদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
সম্মেলনে তৃণমূল থেকে আগত নারীনেত্রীগণ জাতিসংঘের উন্নয়ন অভীষ্ট-এসডিজি অর্জনে নিজ নিজ ও দলগত সফলতা তুলে ধরেন, সংগ্রামের অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময় এবং একইসঙ্গে ভবিষ্যত কর্মকৌশল নির্ধারণে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।
এছাড়া তৃণমূলে নারী নেতৃত্ব বিকাশ কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের সচেতন, সক্রিয় ও সংগঠিত করে একটি আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। উপস্থিত নারীনেত্রীগণ উক্ত ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সবশেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।