করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলাতে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত নাফ নদীর তীরবর্তী টেকনাফ উপজেলার ঝুঁকি অত্যধিক। টেকনাফ উপজেলা বর্তমানে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী মিলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। এ উপজেলার মানুষকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন স্বেচ্ছাব্রতী মানুষের বিভিন্ন উদ্যোগ এলাকার মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে। তেমনই একজন স্বেচ্ছাব্রতী কুলসুমা বেগম।
Author: MD. Shohel Rana
নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আনোয়ারা
‘বান্দরবন জেলা লামা উপজেলা পৌরসভা সদরে বসবাস করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের বিকশিত নারী নেটওর্য়াকের চট্রগ্রাম অঞ্চলের নারীনেত্রী ও বিকশিত নারী নেটওর্য়াকের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এনজেট একতা মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জনাব আনোয়ারা বেগম।
কোভিড-১৯’ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছেন, মাইকিং করা, দেয়াল লিখন, পোস্টারিং, বার বার হাত ধোয়ার কথা বলা, মাস্ক পড়া, মাস্ক বিতরণ করা, সামাজিক শারিরীক দূরত্ব মেনে চলা অব্যহত।
‘প্রত্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এগিয়ে আসছেন নারীনেত্রী রোজিখান’
কক্সবাজার জেলা মহেশখালী উপজেলা মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নিয়াজির পাড়া গ্রামে বসবাস করেন নারীনেত্রী জনাব রোজি খান। তিনি মাতারবাড়ি বেগম রোকেয়া নারী জাগরন সমিতির সভাপতি এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর বিকশিত নারী নেটওর্য়াকের চকরিয়া উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি।
‘কোভিড-১৯ মহামারী প্রাদ্যুভাবে নিজ উদ্যোগে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন, নিজগ্রামে প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্যান্য নারীনেত্রী, মাতারবাড়ি বেগম রোকেয়া নারী জাগরন সমিতির সদস্যদের এবং ইউনিয়নের যুবকদের নিয়ে জরুরী সভা করেন। সভার সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যেকে নিজনিজ ওয়ার্ডে সচেতনমূলক ক্যাম্পেইন কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। মাতারবাড়ী ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে কমিউনিটির যুবকদের দিয়ে মাইকিং করেছেন। প্রতি ওয়ার্ডের গ্রামে, পাড়ায় , বিভিন্ন বাড়ীর আশ-পাশে জীবানুনাশক স্প্রে করেন, সাবান দিয়ে বার বার হাতধোয়ার কথা, হাতধোয়ার পদ্ধতি অনুশীলন করা, মাস্ক ব্যবহার করা, ২০টি মাস্ক বিতরণ করাসহ সামাজিক শারিরীক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ প্রদান করেছেন। সকলের উদ্দেশ্য আহ্বান জানান, আতন্ক নয় সচেতনতাই প্রতিরোধ।
‘গ্রামবাসীকে স্বাস্থ্য বিধির কথা বলছেন নারী নেত্রী মিতা রানী পাল’
কুমিল্লা জেলা লাকসাম উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের কালিয়া চৌ গ্রামে বসবাস করেন জনাব মিতা রানী পাল। তিনি পেশায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের বিকশিত নারী নেটওয়ার্কে নারী নেত্রী । কালিয়া চৌ গ্রামে স্বাস্থ্য আপা হিসাবে পরিচিত।
করোনাভাইরাসের মহামারীতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত তখন বাংলাদেশেও এর বিস্তার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রাথমিকভাবে , মৌলিক স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই কার্যকর একটি উপায় হিসাবে বিশেষজ্ঞ মহল কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। আর এ বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে নিজের গ্রামের মানূষকে করোনাভাইরাসের কবল থেকে নিরাপদ রাখতে মৌলিক স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করছেন নারী নেত্রী মিতারানী পাল। মিতা রানী তার গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, খোলা জায়গায় থু থু না ফেলা, বিশেষ প্রয়োজন ব্যাতিত বাইরে না যাওয়া, বাইরে গেলে মুখে মাস্ক বা নেকাব ব্যবহার করা, অন্য মানুষের সাথে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা প্রভৃতি বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।
কোভিড’১৯ প্রতিরোধে সংরক্ষিত আসনের সদস্য হিসেবে এলাকায় গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখছেন চরমহল্লা ইউনিয়নে নারীনেত্রী জনাব হাফসা বেগম।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাতক উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নে ছোট চরগোবিন্দ গ্রামের দি হাঙ্গার প্রজেক্ট -বাংলাদেশ এর বিকশিত নারীনেটওর্য়াকের নারী নেত্রী, চরমহল্লা ইউনিয়নের ৭,৮,৯ সংরক্ষিত আসনের সদস্য জনাব হাফসা বেগম।
তিনি স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে চরমহল্লা ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের যে সকল গ্রাম আছে, সকল গ্রামে কোভিড’১৯ এর বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে নিজ গ্রামে তারঁ নেতৃত্বে উজ্জীবক, নারীনেত্রী, গ্রাম উন্নয়ন দলের সাথে যৌথভাবে সমন্বয় করে লিফলেট বিতরণ, এলাকায় মাইকিং করা, বার বার হাতধোয়ার পদ্ধতি অনুশীলন, মাস্ক ব্যবহার করা, বাড়ীর আশে-পাশে পরিস্কার রাখা, যেথানে-সেখানে হাচিঁ-কাশি,থুথু না ফেলা সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ঘরে অবস্থান করতে বলেন। তাছাড়া ২টি পরিবারকে হোমকোয়ারেন্টেনে রেখে নিয়মিত ফলোআপ করেছেন। চরমহল্লা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন গুরুত্বর্পূণ স্থানে ২০০টি মাস্ক এবং ২০০টি হাতধোয়ার সাবান বিতরণ করেন।
‘অনন্য ভূমিকায় নারীনেত্রী হাসমিনা লুনা’
কোভিড’১৯ প্রতিরোধে নিজ উদ্যোগে করোনাভাইরাস মুক্ত বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছেন, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। বিকশিত নারীর নেটওর্য়াকের দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি নারীনেত্রী জনাব হাসমিন লুনা।
তিনি বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমনের শুরুতেই নিজ উদ্যোগে সচেতনমূলক কর্মসূচি লিফলেট বিতরণ, সঠিক নিয়মে হাতধোয়া অনুশীলন করানো, মাস্ক ব্যবহারের জন্য ২০০টি মাস্ক বিতরণ, ২০০টি সাবান বিতরণ করেন, সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা বিষয়ে সচেতন করেন। তিনি গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঘরে থাকা, বার বার হাত ধোয়ার কথা , সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা, মায়েদের খাদ্যঅভ্যাস সঠিক নিয়মে, আয়রন-ক্যালসিয়াম ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা, ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর, এম্বুলেন্সের সাথে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর, এমনকি প্রয়োজনে তাঁর নিজের মোবাইল নম্বর গর্ভবতী মায়েদের পরিবারের কাছে দিয়ে আসেন। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ও পরামর্শ দেন।
নারীনেত্রী রাহিমা আক্তার লাকীর করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম
চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের মোদারপুর গ্রামের নারীনেত্রী রাহিমা আক্তার লাকীর করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম
সারা বিশ্ব যখন আতঙ্কিত ঠিক তখনই করোনা ভাইরাস কে প্রতিরোধ করতে মাঠে কাজ করছে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর একদল সেচ্ছাব্রতী । ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মোদারপুর গ্রামে, মোদারপুর গ্রাম উন্নয়ন দলের সাধারন সম্পাদক রাহিমা আক্তার লাকি এবং ইয়ূথ লিডার জিকুসহ অনেকেই । রাহিমা আক্তার লাকি দি হাঙ্গার প্রজেক্ট হতে ২০১৩সালে বিকশিত নারী নেটওয়াক এর আয়োজনে নারীনেতৃত্ব বিকাশ শীর্ষক ফাইন্ডেশন কোর্স প্রশিক্ষন নিয়ে গ্রামে বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করে আসছেন,তারই ধারাবাহিকতায় দেশের যখন এই মহামারীর সময়ে তার নিজের গ্রাম মোদারপুর কে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত করতে হাতে নিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ। Read more
করোনাভাইরাস মুক্ত গ্রাম গড়ার প্রত্যয়ে নারী নেত্রী ছেনুয়ারা বেগম।
আতঙ্কনয়, সচেতনতায় সম্ভব করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এ প্রত্যয় নিয়ে বিকশিত নারী নেটওয়াকের্র নারী নেত্রী এবং গ্রাম উন্নয়ন কমিটির অন্যতম সক্রিয় সদস্য ছেনুয়ারা বেগম।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া প্রত্যন্ত উপকূলীয় উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে বসবাস করেন তিনি। এই গ্রামের মানুষ পূব থেকেই শিক্ষা স্বাস্থ্যসচেতনতায় পিছিয়ে আছেন। করোনারভাইনাসের এই মহামারীতে নিজ উদ্যোগে গ্রামের অন্য নারীনেত্রীদের সাথে আলোচনা করে সর্বপ্রথম সচেতনতা জাগরণের জন্য এগিয়ে আসেন। শুরুতে গ্রামের লোকজন ছেনুয়ারার কথার গুরুত্ব ছিল না, তারপরও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সচেতনতামূলক কাজে লিফলেট বিতরণ করেন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা, মাস্ক ব্যবহারের কথা, মাস্ক ব্যবহারের পদ্ধতি, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকা, সামাজিক শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলেন। নিজ উদ্যোগে ১০০টি ডেটল সাবান ১০০জন নারীদের এবং ২০টি মাস্ক বিতরণ করেন। নিজ গ্রামে জীবাণুনাশক পানি ছিটান।
“এ লড়াই একার নয়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়তে হবে” সৈয়দা আরমিনা আক্তার।
“এ লড়াই একার নয়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়তে হবে” এমনই উদ্দীপ্ত আহ্বান জানান বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি জনাব সৈয়দা আরমিনা আক্তার।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের সিরাজনগর গ্রামে তিনি বসবাস করেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়ার শুরুর দিন অর্থাৎ সেই ৮ মার্চের পরেই তিনি নিজ ইউনিয়নের সকল নারীনেত্রীদের নিয়ে একটি জরুরি সভা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সকলেই যৌথভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতার কার্যক্রম চালাবেন। একই গ্রামের নারীনেত্রী হোসনেয়ারা সুইটিকে সাথে নিয়ে তিনি এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক লিফলেট বিতরণ শুরু করেন। একই সাথে ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বার বার হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা এবং শারীরিক দূরত্বের প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে ক্যাম্পেইন করেন।
দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রেখেছেন নারীনেত্রী রহিমা বেগম
করোনাআতন্কে সারা বিশ্বের মানুষ যখন জীবন বাঁচানোর জন্য গৃহবন্দী সেই সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবলা প্রাণীদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন রাজশাহী জেলার পবা উপজেলা বড়গাছি ইউনিয়নের বড়গাছি গ্রামের নারীনেত্রী রহিমা বেগম। নিজ উদ্যোগে বড়গাছি ইউনিয়নের সকল নারীনেত্রীদের নিয়ে সভা করেন। সভার সিন্ধান্ত নেন প্রত্যেকে নিজনিজ এলাকায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা করা এবং বিভিন্নভাবে সহযোগীতার কাজ করবেন। তিনি বিকশিত নারী নেটওর্য়াকের কেন্দ্রীয় কার্যর্নিবাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ।